Thu, Nov 21, 2024

Have a Nice Day

0 comments 0 views
🕗: 5 minutes
বর্তমান যামানাতেও আমার স্বামীর পচ্ছন্দবোধ একদম’ই খারাপ। একটা কম দামী শাড়ি কিনে এনেছে আমার জন্য ঈদের উপহার হিসেবে। অথচ বাবার বাড়িতে থাকতে প্রতি ঈদে আমার চার পাঁচটা করে ড্রেস উঠতো, তাও আবার অনেক দামী দামী।
আমার স্বামী হিশাম’কে তার অফিস থেকে শুরু করে প্রতিবেশীরা পর্যন্ত এক নামে চেনে। হিশাম সৎ,অতি বিশ্বস্ত আর ভালো মনের একজন মানুষ। অফিসে তার বাকি কলিগরা যেখানে ঘুষের উপর ঘুষ খেয়ে খাতা সাইন করে সেখানে হিশাম সর্বদা সততার পরিচয় দিয়ে আজও প্রমোশনের সিড়িটাই ছুঁতে পারেনি। এই জন্যই আমার বাবার অতি-পচ্ছন্দের পাত্র ছিলো হিশাম।
কেন জানি না বিয়ের এক বছর পর আজ এই প্রথম মনে মনে ভীষণ রাগ হলো হিশামের উপর। বছরে দুইটা ঈদ বাকি সময় থ্রি-পিছ পড়ে পার করলেও ঈদে অন্তত দামী একটা শাড়ির আশা করতেই পারি। আমার বাবার বাড়ি গ্রামে, সেখানে ঈদে বেড়াতে গেলে পারা প্রতিবেশীরা দলে দলে দেখতে আসে। তারা সবাই জানে সোনিয়ার জামাই ভালো অফিসে চাকরি করে।অথচ আমিতো জানি মহৎ ব্যক্তিটা এক টাকাও অসৎভাবে নেন না।
প্রচন্ড রাগে গজগজ করতে করতে বিছানার চাদরটা মেলছিলাম। রাগের সাথে শাড়ি আর খালি প্যাকেট টা সাইড করে রাখতেই প্যাকেট থেকে কিছু একটা মেঝেতে পড়লো। শাড়ি দেখে রেগেমেগে প্যাকেটের ভেতরে আর কিছু আছে কি না সেটা খেয়ালই করিনি। খানিক নিচু হয়ে তুলতেই দেখলাম ভাঁজকরা রঙ্গিন একটা কাগজ।কাগজটা খুলতেই দেখলাম বেশ বড়সড় একটা চিঠি।সেখানে গুছিয়ে হিশামের সুন্দর হাতের লেখাগুলো,
“প্রিয়তমা স্ত্রী”
আমি জানি তোমার এই শাড়িটা অনেক পচ্ছন্দ হয়েছে।হবে নাই বা কেন বলো? আমার পচ্ছন্দই তো সর্বদা তোমার পচ্ছন্দ হয়েছে। আর আমি এটাও জানি,আমি যদি তোমার জন্য একটা কাজলও কিনে আনি তুমি তাতেই অনেক খুশি হবে।
জানোতো যেদিন তোমায় প্রথম দেখতে গিয়েছিলাম তুমি রুমে ঢোকার আগেই আমার হবু শ্বশুর তোমার সম্পর্কে আমায় কি বলেছিলো? বাবা বলেছিলেন, শোনো বাবা হিশাম আমার মেয়েটা কিন্তু বড্ড বেশিই অল্পতে তুষ্ট।ও’কে অল্প জিনিস দিয়েই খুশি করা যায়, কখনো বেশির জন্য মন খারাপ করে থাকে না।
আমি সেদিন শ্বশুর আব্বার কথা শুনে এটাই বুঝেছিলাম যে ভাগ্য করে এমন একটা স্ত্রী পাবো।
আমাদের এক বছরের এই সংসার জীবনে কখনো আমি তোমার মুখটা কোনো কারণে ভার হতে দেখিনি।ভবিষ্যতে কোনোদিন দেখতেও চায়না।
আশে-পাশে যেখানে তাকালেই সহকর্মীদের স্ত্রী’দের হাজারটা দামী দামী বায়নাগুলোর গল্প শুনতাম। সেখানে আমি মনে মনে শুকরিয়া আদায় করতাম তোমার মতো স্ত্রী’কে পেয়ে। সত্যিই আমি সন্তুষ্ট তোমায় পেয়ে।সংক্ষিপ্ত এই জীবনে একজন ভালো স্ত্রী থাকলে সুখের কি অভাব হয় বলো?
জানোতো সোনিয়া, আমার না খুব ইচ্ছে করে তোমায় দামী কাপড় চোপড় পড়াতে। কিন্তু কি বলো আমিতো নিজের বিবেক’কে মানুষের মতো সস্তা দামে ক্রয় করতে পারি না। তাই আল্লাহ তায়া’লা যতটুকু হালাল ভাবে উপার্জন করতে দেয় ততোটুকু নিয়েই যে সন্তুষ্ট থাকি।সেইটুকুর মাঝেই চেষ্টা করি তোমায় সাজাতে।জানি তুমিও তাতেই সন্তুষ্ট হও।
আমিতো মাঝে মাঝে খুব অবাক হই, যখন দেখি তুমি ঘেমে-নেয়ে কাজ করে আসলেও আমার দ্বিতীয়বার চা খাওয়ার আবদারে এতটুকুও বিরক্তি প্রকাশ করো না।হয়তো আজ অবাক হচ্ছো এতো কথা কেন লিখছি?আজকে অফিসে তেমন কাজ ছিলো না। তাই শাড়ির প্যাকেটটা  পাশে রেখেই তোমায় নিয়ে লিখতে শুরু করলাম।
এর মাঝে কয়েকবার আমার কলিগরাও এসেছিলো।তারা মুচকি হেসে চিঠি লিখতে দেখে কি বললো জানো?
হিশাম সাহেব,আপনিইতো এই অফিসে একমাত্র সুখী স্বামী যার স্ত্রী’কে নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই।
আমি তাদের কথা শুনে মুচকি হেসে মনে মনে সন্তুষ্ট হলাম। সত্যিইতো আমি সুখী স্বামী যার তোমার মতো স্ত্রী আছে সে তো সুখীই এই পৃথিবীতে।
সোনিয়া আজকে রাতের খাবারে তোমার পচ্ছন্দের ভুনা খিচুড়ি আর গরুর মাংসটা রান্না করবে? ভাবছো আমার এতো খেতে ইচ্ছে হলো কেন? কারণ তোমার সব প্রিয়তেই কিভাবে যেন আমারও প্রিয় হয়ে ওঠে।আজ আকাশের অবস্থাও খুব ভালো নেই হয়তো বৃষ্টি হবে।বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি টা খারাপ হবে না বলো? আজ না হয় এই পর্যন্তই থাক, সারাজীবনতো পরেই রইলো তোমার প্রশংসা করার জন্য।
ভালোবাসি তোমায় খুব!
ইতি তোমার,
“প্রিয়তম স্বামী”
চিঠিটা রাখতেই আমার দু’চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝড়ছিলো। শাড়িটা বিছানা থেকে তুলে হাতে নিতেই অশ্রুফোটাগুলো শাড়ির ওপর অনবরত পরছিলো।নিজের উপর নিজের আজ ভীষণ রাগ হচ্ছে। কি করে পারলাম এমন সৎ স্বামীর উপর রাগান্বিত হতে?কিভাবে পারলাম এমন ভালো মনের মানুষ’কে মনে মনে দোষারোপ করতে?
সত্যিইতো আমার বাবাতো ঠিকই বলেছেন, আমিতো অল্পতেই তুষ্ট ছিলাম সবসময়। কখনো তো এমন বিবেকহীন মানুষের মতো করে ভাবিনি,তাহলে আজ আমার হঠাৎ কি হলো?
আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে চোখ-মুখ মুছে দৌঁড়ে গেলাম রান্নাঘরের দিকে।
চুলায় রান্না বসিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম হিশামের জন্য। হিশাম অফিস থেকে এসেই শাড়ির প্যাকেট টা রেখে বাইরে চলে গেছে। কিন্তু ওর ফিরতে এতো দেরি হচ্ছে দেখে মন খুব খারাপ করছিলো। তারওপর বাইরে আকাশের অবস্থাটাও তেমন ভালো না।বার বার ফোন দিয়েও হিশাম কে পাচ্ছি না, নাম্বারটা বন্ধ দেখাচ্ছে।এবার খুব চিন্তা হতে লাগলো। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর কলিংবেলের আওয়াজ হলো। ছুটে গেলাম দরজার দিকে। দরজা খুলতেই দেখলাম হিশাম মাথায় টুপি পড়া অবস্থায় দুইটা প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলাম ও একেবারে এশার নামাজ আদায় করেই এসেছে। তার জন্যই হয়তো ফোনটা বন্ধ দেখাচ্ছিলো।
রুমে ঢুকতেই ও’কে প্রশ্ন করলাম,
-কিসের প্যাকেট এগুলো?
হিশাম উত্তরে বললো,
–খুলে দেখো তুমি।
প্যাকেট দুটো খুলতেই দেখলাম একই ডিজাইনের ভিন্ন রঙের দুইটা পাঞ্জাবি। প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে হিশামের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হিশাম প্রশ্নটা বুঝতে পেরেই মুচকি হেসে উত্তর দিলো, একটা আব্বার জন্য আরেক টা বাবার জন্য।
কি জানি ভেবে চোখদুটো আমার ভরে উঠলো। এমন মানুষও হয় এ যুগে? যে কিনা স্ত্রী না বলাতেও ঈদে নিজের বাবার সাথে শ্বশুরের জন্যও পাঞ্জাবি কেনে?
হিশাম কে যত দেখতেছি ততোই অবাক হচ্ছি। একজন ভালো মানুষের কত গুন থাকতে পারে ও’কে না দেখলে কোনোদিন বুঝতামই না।
রাতে খাবার টেবিলে বসে খাবার বাড়ছিলাম। হিশাম খাবার টেবিলে ভুনা খিচুড়ি আর গরুর মাংস দেখে মুচকি একটা হাসি দিলো। হয়তো মনে মনে ভাবছে,আমার স্ত্রী তাহলে চিঠিটা পড়েছে।
আমি দুইটা প্লেটে খাবার বাড়তেই হিশাম বারন করে বললো,আজ একটা প্লেটেই থাক। আমি আর কিছু না বলে ওর প্লেটটাতেই শুধু খিচুড়ি আর মাংস নিলাম। এক লোকমা খাবার ওর মুখের সামনে ধরতেই সেটা তৃপ্তি সহকারে খেয়ে নিলো। ওর মুখের অঙ্গভঙ্গি দেখে এটাই বুঝলাম খাবারটা আজ হয়তো বেশ ভালোই হয়েছে।
এবার হিশাম এক লোকমা খাবার আমার মুখে দিতেই আমি আর সেটা ভিতরে নিতে পারছিলাম না। ভ্রু-জুগল কুচকে হিশামের মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। মাংসের ঝোলে প্রচুর পরিমানে লবন বেশি।আমার এমন রান্নার সমস্যা মাঝে মাঝেই হয়ে থাকে।অথচ এই মানুষ টা বরাবরের মতোই তৃপ্তির সাথে এক বাক্য উচ্চারণ না করেই খেয়ে ওঠে।
আজ আর প্রশ্ন না করে থাকতে পারলাম না।
হিশাম কে বললাম,
-আচ্ছা মাংসের ঝোল যে এতো তেতো লবনে, সেটা কি তুমি বুঝতে পারছো না?
–ধুর বোকা মেয়ে,এমন তো একটু মাঝেমধ্যে হবেই।কেউ কি জন্ম থেকে শিখে আসে নাকি?আজকে,কালকে, মাঝেমধ্যেই তেতো হবে আর পরশু একদম ঠিক হয়ে যাবে। এরজন্য কেন কিছু বলবো বলো?
-তাই বলে প্রায় দিনই এমন চুপচাপ তৃপ্তির সাথে কেউ খাবে? আমার বান্ধবীদের মুখে শুনেছি ওদের স্বামী’রা নাকি তরকারি একটু খারাপ হলেই বকা ঝকা শুরু করে। আর কেউ কেউতো শুনেছি চড় থাপ্পড়ও খেয়েছে এই রান্নার জন্যই।
–শোনো সোনিয়া,যারা স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে তারা পুরুষ নয় তারা হলো কাপুরষ। স্ত্রী’কে মারধর করে পুরুষত্ব জাহির করলে কেউ স্বামী হতে পারে না। একজন প্রকৃত স্বামী কখনো স্ত্রী’র গায়ে হাত তুলে শাসন করবে না। বরং ভালোবেসে বুঝিয়ে শুনিয়ে সেই কাজটা করাবে। অবশ্যই প্রত্যেক স্বামীর উচিৎ স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করা। তার ভুলগুলো সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে ধরিয়ে দেওয়া।বুঝতে পেরেছো আমার প্রিয়তমা স্ত্রী?
এতক্ষণ অবাক হয়ে হিশামের কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম।আজ নিজেকে বড্ড বেশি সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। এখন বুঝতে পারছি আমার বাবা কেন এই সৎ,ভালো মনের মানুষটা’কে এতো পচ্ছন্দ করে তার সাথেই আমার বিয়েটা দিয়েছে।
হিশাম আমার ডান হাতটা কিঞ্চিৎ ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো, কি হলো বুঝতে পারো নি?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-জ্বি প্রিয়তম স্বামী, বুঝতে পেরেছি আমি।
আমার কথাটা শেষ না হতেই হিশাম আর আমি দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলাম।
(বাবার বাড়িতে কি আছে না আছে সেই অহংকার করে কখনো স্বামী’কে ছোট করবেন না। কারণ বাবার বাড়ির সম্পদ বিয়ের পরে আর কোনো কাজে আসে না।আপনার স্বামীর কি আছে সেটাই মানুষ খুঁজবে তাই স্বামীর যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে শিখুন।অল্পতেই তুষ্ট মানুষগুলোকে সকলেই ভালোবাসে আর স্বামী সে তো আরো বেশিই ভালোবাসবে। সেই সংসারেই সুখের অভাব হয় না যেখানে স্ত্রী স্বামীর সামান্য উপহারেও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।)
সমাপ্ত 
 
ধন্যবাদ লেখা গুলো পড়ার জন্য ও লেখা ভালো লাগলে শেয়ার করবেন।
Md Efaz
Web Developer
Narayanganj Bangladesh
I am a dedicated WordPress developer with 4 years of experience on Fiverr. I specialize in developing all kinds of websites and landing pages, ensuring they are professional, responsive, and visually appealing. My goal is to bring your vision to life, whether it's a business site, e-commerce store, portfolio, or any other web solution. Let's work together to create a website that perfectly fits your needs and stands out in today’s digital landscape.
 

Leave a Comment