দিহান এই ক্ষুদ্র জীবনে মানুষের হিংস্রতা, অহংকার, দাম্ভিকতা ও ক্ষমতার বড়াই দেখে যখন দিন শেষে ক্লান্ত! যখন আশেপাশের মানুষের প্রভাব গুলো দেখে দিহান নিজের জীবনের চিন্তা ভাবনার সাথে তাঁদের আচরণ গুলো সাংঘর্ষিক মনে করলো ও চিন্তা করলো তাঁদের কি এই ক্ষনস্থায়ী জীবনের প্রতি এতোই মায়া যাঁর জন্য এই সব আচরণ তারা করতেছে মৃত্যুকে ভুলে ক্ষমতাহীনদের সঙ্গে।
অথচ মৃত্যুই মানবজাতির জন্য একমাত্র চিরন্তন সত্য, দাম্ভিকতা, অহংকার, ক্ষমতা ও ধন ধৌলত তা এই পৃথিবীতেই ক্ষনস্থায়ী! মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথেই সব কিছুই শেষ হবে, আর শুরু হবে এক কঠিন চিরস্থায়ী যাত্রা।
দিহান পরিবারের এক মাত্র ছেলে থাকা সত্বেও তাঁর মধ্যে খুব ভালো চিন্তা ভাবনা ও এই সমাজ জাতি ধর্মবর্ণ সবার মধ্যে চেয়েছিল সাম্যতার ডাক। দিহান চেয়েছিল পড়াশোনার থেকে শুধু শিক্ষার সার্টিফিকেট নয়, পড়াশোনার মধ্যে থেকে সব চাইতে বড় অমূল্য সম্পদ সু-শিক্ষা অর্জন করা! যে শিক্ষা সমাজ, রাষ্ট্র ও মানুষ হিসেবে জাতির উপকার করবে।
কিন্ত দিহানের সু-চিন্তা ভাবনা দেখে এলাকার ক্ষমতানবানরা তাঁকে ভালো থাকতে দিলো না! দিহান চেয়েছিল সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক নম্রতা-সাম্যতা- ধনী গরীব ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাহীন সবার যেনো পরিচয় একটাই হয়! আর সেটা হলো মানুষ।
কিন্ত সেই ক্ষমতাবান অপরাধী ব্যক্তিরা ঠিকই একদিন দিহানকে তাঁদের আক্রুশের স্বীকার করলো। দিহানকে নির্জন একটি জায়গায় পেয়ে তারা তাঁকে হত্যা করতে চাইলো!
দিহান নিজের জীবন বাচানোর জন্য কখনো অন্যায় ও সাম্যতার পৃথিবীতে কখনো অন্যায় কথা গুলো সমর্থন না করে নিজের জীবনকে নির্জন অন্ধকারে পাষণ্ডরা হাতে তুলে দিলো আর এইকথা গুলো মৃত্যুর আগে দিহান তাঁদেরকে বললো!
“সাম্যতার পৃথিবীতে হবে একদিন জয়ের গান-
ক্ষমতা দাম্ভিকতার শিকল ছিন্ন করে
মজলুমরা মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে
সাম্যতার পতাকা উড়াবে!
সেই দিন বিজয়ের উল্লাসে লাখো দিহানের স্বপ্ন পূর্ণ হবে।
আমি মরিতে রাজি পুরুষেরি মতো-
বাচিলে মরিতে হবে মৃত্যুরি বিধানে!
মনে রেখো!
সাম্যতার বিজয় হবে একদিন এই পৃথিবীতে”।
পাষণ্ডরা তাঁর জীবনের শেষ কথা গুলো শুনে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে পানিতে টুকরো টুকরো করে ভেসে দিলো।
দিহানের লাশ টুকোও দিহানের পরিবার আর খুঁজে পেলো না। পরিবারের একটি মাত্র সন্তানের শোকে বাবা-মা দু’জনই মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
দিহানের মৃত্যুর অনেক বছর পেরিয়ে গেল! ধীরে ধীরে নিজ এলাকার সবাই দিহানকে ভুলে স্বাভাবিক হতে লাগলো।
একদিন সেই ক্ষমতাবান দিহানের হত্যাকারী ব্যক্তিরা বেড়াতে যাবে। তাঁরা একটি প্লেনে করে যাচ্ছিলো! হঠাৎ করে প্লেনটি মধ্য আকাশে বিমানের ডান পাখাতে আগুন লেগে গেলো, এই আগুন সারা বিমানে ধাও ধাও করে জ্বলতে লাগলো! বিমানের পাইলটটি বিমানকে মধ্য আকাশে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে বিমানটি আকাশেই ক্রাশ হলো। তারপর বিমান ও বিমানের থাকা সব যাত্রীরাই জ্বলে মাটিতে পড়লো।
তখন সেই ক্ষমতাবান দিহানের হত্যাকারী ব্যক্তিরা দেখলো! বিমানে আগুন লেগে চতুর দিক দিয়ে আগুন আর আগুন সেই আগুনে বিমান সহ বিমানের সব যাত্রীররাই জ্বলছে শুধু তারাই বাদে! চারদিকে মানুষ আর মানুষ এসেছে লাশ গুলো দেখতে, অ্যাম্বুল্যান্স, ফায়ার সার্ভিস, ডাক্তার, সাংবাদিক সবাই এসেছে লাশ গুলো উদ্ধার করতে।
দিহানের হত্যাকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সব চাইতে ক্ষমতাবান ব্যক্তি আনিসুল হক ছিলো! আনিসুল হক ডাক্তার ফায়ার সার্ভিসের লোকদের বললো আমি ছিলাম এই বিমানে কিভাবে বিমানটিতে আগুন লাগলো আমি বলতেছি আপনাদেরকে! কিন্ত কেউই আনিসুল হকের কথা শুনতে পাইলো না, চিৎকার করে কথা গুলো বলতে চাইছে কিন্ত কেউ আনিসুল হকের কথা শুনছে না।
হঠাৎ দিহানের হত্যাকারী আনিসুল হক দেখলো তাঁর পড়নের পোষাকের মতো দেখতে তাঁর কাপড় ও কাপড়ের ভিতরে আগুনে জ্বলন্ত বীভৎস লাশ দেখে সে আশ্চর্য হয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে লাশ বহন কারী ব্যক্তিদের বললো আপনারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।
আমি বেঁচে আছি! এই দেখো আমার পোষাক এখনো নতুন! আমার শরীর বিমানের এক্সিডেন্টেও কিছু হয়নি, আমি সুস্থ আছি।
কিন্ত আনিসুল হকের কথা অ্যাম্বুল্যান্সের লাশ বহন কারী কেউ শুনতে পেলো না।
আনিসুল হক চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো কিন্ত কোনো মানুষ, ডাক্তার, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুল্যান্স ও আশেপাশের কেউই আনিসুল হকের চিৎকার শুনতে পেলো না।
তখনি আনিসুল হক মনে মনে ভাবলো হয়তো আমিই এখন মৃত। আমি সবার সাথেই বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছি, এটি আমার আত্মা যে কথা গুলো বলতেছে, যা পৃথিবীর মানুষ গুলো শুনতে পাচ্ছে না আমার চিৎকার ও কান্নার শব্দগুলো।
তখনি দিহানের আত্মা হাজির হয়ে আনিসুল হককে বললো আপনি ঠিকই ভেবেছেন এটি আপনার আত্মা আপনি এখন থেকে মৃত ব্যক্তি! আপনার কথা গুলো এখন থেকে পৃথিবীর কেউ শুনতে পাবে না।
তখনি আনিসুল হক আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো আপনি কে? যে আমার কথা আপনি শুনতে পাচ্ছেন-আর জবাব দিচ্ছেন!? তখন দিহান জবাবে বললো! আমিই সেই দিহান, যেই দিহানকে আপনি হত্যা করেছিলেন অনেক বছর আগেই! আমার অপরাধ ছিলো বৈষম্যমুক্ত ও সাম্যতার পৃথিবীতে সাম্যতা প্রতিষ্ঠা করা, সুন্দর একটি সমাজ ও জাতি গঠিত করা।
কিন্ত আপনার সেই অহংকার, হিংসা ও দাম্ভিকতায় আপনি আমাকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে পানিতে ভেসে দিয়েছিলেন, আমিই সেই দিহান! মনে পড়েছে আপনার?
তখন আনিসুল হক জবাবে বললো হ্যা মনে পড়েছে আমার।
তখন দিহান বললো! যে পৃথিবীর ধন সম্পদ, হিংসা, অহংকার, ক্ষমতার বড়াই করে ছিলেন আপনি, আজ থেকে আপনি ধন সম্পদ থেকে বে-ভাট হয়ে খালি হাতে এই আত্মার পৃথিবীতে আসলেন, এইখানে আপনার হিংসা অহংকার ও ক্ষমতা কিছুই কাজে আসবে না আর না দুনিয়ায় জমানো আপনার কোনো ধন সম্পদটাও! যা কাজে আসবে সেটি শুধু আপনার দুনিয়ায় থাকাকালীন ভালো কর্মফল।
এই আত্মার পৃথিবীতে আপনাকে স্বাগতম! আজ থেকে আপনার কর্মের ফল শুরু হবে যা দুনিয়ায় থাকাকালীন আপনি করেছিলেন! এই বলে দিহানের আত্মা অদৃশ্য হয়ে গেলো।
আনিসুল হক দিহানের কথা গুলো শুনে আবারো মনে মনে ভাবলো যদি এখন আবার ঐ মানুষের পৃথিবীতে যেতে পারতাম তাহলে মানুষের পৃথিবীর সব ভালো কাজই আমি করতাম!
কিন্ত স্রষ্টার সৃষ্টির বিধানে আর সেটি সম্ভব নয়, মৃতের পৃথিবী থেকে মানুষের পৃথিবীতে আবারো চলে যাওয়ার।
এখন মৃতের পৃথিবীতে আনিসুল হক মানুষের পৃথিবীতে থাকাকালীন সব খারাপ কর্মের জন্য আফসোস ও কান্না করতেছে।
কিন্ত আর সম্ভব নয় আবারো ঐ মানুষের পৃথিবীতে গিয়ে নিজের পাপের প্রায়চিশ্ত করার।
মৃত্যু সম্পর্কে উক্তি পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ধন্যবাদ আপনাকে।