0 comments 0 views

লেখকঃ- মাহিদুল ইসলাম আল্ মাহ্দী
লেখার তারিখঃ- ০৬-১০-২০২০ ইংরেজি

 

ধর্ষণের প্রতিবাদে অনেক সময় মোমবাতি জ্বালিয়ে নীরবতার কর্মসূচি নেয়া হয়। এর কারণ কী? কারণ মানুষকে জানিয়ে দেয়া যে প্রতিবাদ করে কোন লাভ হবে না। নারীকে নিরবে পুড়তে হবে মোমের মতোই। সম্পূর্ণ একা!

মুসলিম রাষ্ট্রে কেনো ধর্ষণের বিচার সঠিকভাবে হবে না? কেনো অপরাধের বিচারের বিলম্বে অপরাধ তৈরি করছে রাষ্ট্র? এই প্রশ্ন আজ দেশের মানুষের কাছে!

ধর্ষিতা নারী একবার ধর্ষণের পর আরো একাধিকবার ধর্ষণ হতে হয়, জানেন কীভাবে? প্রথমে নিউজ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনামে, তারপর সমাজের বিভিন্ন মানুষের কথার সম্মুখীন হয়ে, তারপর প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষিতার মেডিকেল পরীক্ষা করে থাকে পুরুষের মাধ্যমে। নারীর বিচার চাইতে গেলেও তাই পদে পদে বাঁধা। পুরুষরা যখন ধর্ষিতার মেডিকেল টেস্ট করে তখন প্রাপ্য মানবিকতার সাথে সাথে হয়তো অনেক পুরুষের লালসার দৃষ্টিটাও কাজ করতে পারে। যদি ধর্ষিতার বুকের মাপ বড় হয় তখনও অসুবিধে। বিশ্বাস হচ্ছে না?

আগেই বলা হয়েছিল যে মেডিকেল টেস্ট ও বিচারের নামে ধর্ষিতা আরও একাধিক-বার অন্তত ধর্ষিত হয়। বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে, একারণে যে যখন মেডিকাল টেস্টে ধর্ষিতার ‘বুক বড়’- এমন লেখা হয় তখন কোর্টে দাঁড়িয়ে ধর্ষকের আইনজীবী বলেন- দেখুন মাই লর্ড, যিনি অভিযোগ করেছেন তাঁকে দেখুন। তার বুক বা পেছন দেখে কী মনে হয় না যে সে এসব কাজে আগে থেকেই অভিজ্ঞ? তখন ধর্ষিতা নারী বিচারের নামে অশ্লীলতার সম্মুখীন ও কথার ধর্ষণের স্বীকার হয়।

ধর্ষকদের আইনজীবীরা ধর্ষককে বাঁচাতে ধর্ষিতাকে আরও অনেক নির্মম প্রশ্ন করে থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো ধর্ষকের আইনজীবীরা ‘স্পট ডেমনস্ট্রেশন’ দেন। সোনামুখী সুঁই বিচারকের সামনে তুলে ধরা হয়। এরপর সুতো ভরার সময় সুঁইটাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সুতো ভরা যায় না। তখন প্রশ্ন তোলা হয় ইচ্ছে না করলে কিংবা বাঁধা দিলে যেমন সুই-এ সূতো ভরা যায় না তেমনি সদিচ্ছা ছাড়া যৌনকর্ম করাও সম্ভব না। সুতরাং মাই লর্ড এটা ধর্ষণ না। ভালোবাসার সময়কার একটা সুন্দর স্মৃতিকে হীনউদ্দেশ্যে মামলার বাদী ধর্ষণ মামলা বলে চালিয়ে দিচ্ছে! আদালতের কাছে কি বড় টাকার উকিল আর কম টাকা ফিস নেয়া উকিলের মূল্য আলাদা?

আইনজীবীদের কাছে হয়তো আসামীকে ছাড়িয়ে আনাই মুখ্য। একই আবেদন যখন নামী ও দামী উকিল করেন তখন আদালতের পর্যবেক্ষণ যা হয় খুব সাধারণ কোন উকিলের আবেদনে কী আদালত একইভাবে সাড়া দেন? শত বছর ধরে ধর্ষিতার আত্মহত্যা করার মতো এই প্রশ্ন ঝুলছে। এমন অভিজ্ঞতা, যিনি ভোগান্তির সম্মুখীন হন তিনিই ভালো বলতে পারবেন! (সংগৃহীত)

আমার পরিবারে আইনজীবী আছে আমি জানি ধর্ষিতা নারীকে কি ভাবে কোর্টে হেনস্থা হতে হয় ও কি ধরণের কথার সম্মুখীন হতে হয় আইনজীবী ও বিচারকদের সামনে। এতেই একটা মেয়ে ধর্ষণের বোঝা মাথায় নিয়ে ডিপ্রেশনে ভোগছে তাঁরমধ্যে এই বেহায়াপনা।

যাঁরা বলে ধর্ষকের কাছ থেকে যদি বাঁচতে না পারো তাহলে উপভোগ করাই উত্তম এতে করে ধর্ষক শান্তি ও স্বস্তি পাবে আর তোমারও শরীরে আঘাত ও ক্ষতি হবে না, বেঁচে যাবে ধর্ষকের হাত থেকে। তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি! যাঁরা এই কথা বলেছে সেই কথা তোমার মায়ের ক্ষেত্রে বোনের ক্ষেত্রে কি এই কথা প্রযোজ্য? নিশ্চয়ই না হবে! কারণ কেউ চায় না নিজের পরিবারের মা-বোন ধর্ষণের স্বীকার হোক্!

একজন নারী ধর্ষণের পর হাজারবার ধর্ষণের স্বীকার হতে হয়, ধর্ষণের পর বেঁচে গেলে সারাজীবন মৃত অবস্থায় বেঁচে রয়।

একজন নারী ধর্ষণ থেকে বাঁচতে জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত লড়াই করা সেটা তাঁর কর্তব্য, একটা নারী নিজের সম্মান রক্ষার্থে হাজারটা খুন করা সেটা তাঁর দায়িত্ব নিজেকে রক্ষার্থে। উপভোগ করা সেটা তাঁর দ্বায়িত্ব না- যা আপনারা বলছেন অসুস্থ মস্তিষ্কে।

একজন নারী ধর্ষণ গোপন করলে ধর্ষক আরো একাধিকবার ব্ল্যাকমেল করে ধর্ষণের চেষ্টা করবে, সেটা কি কখনো ভেবেছেন। যে আইনজীবীরা ধর্ষককে বাঁচাতে কোর্টে ধর্ষিতাকে সবার সামনে মানসিক ধর্ষণ করছেন-সেটা কি আপনার শিক্ষিত বিবেক আপনাকে বলছে কখনো? আপনি কোর্টে ধর্ষিতাকে মানসিক হত্যা করছেন। হত্যা করছেন সুষ্ঠ বিচারের নামে তাঁর জীবনকে, ও প্রকাশ করে হ্যাঁয় প্রতিপন্ন করছেন তাঁর সম্মানকে। আসলে আইনজীবীদের কাছে টাকার মূল্যেই বেশি তাঁদের শিক্ষা ছিলো অর্থের জন্য, যা সু-শিক্ষা না, যে শিক্ষায় মানুষদের উপকার করবে?

যাঁরা প্রতিবাদ না করে ধর্ষণ হয়, আত্মসম্মান ও আত্বমর্যাদার জন্য ধর্ষণকে গোপন রাখে নিজেকে সমাজের চোখে ভালো রাখতে, জানেন কি কখনো! তাঁরা আরো একাধিকবার ধর্ষণের স্বীকার হতে হয়, এই গোপন রাখার জন্য। জানেন কি কখনো? ধর্ষিতা নারী তাঁরা তিলে তিলে ধ্বংস হয় মানসিক ভাবে, আর কেউ কেউ এই যন্ত্রণা কাউকে বলতে না পেরে নিজেই আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয় এই পৃথিবীতে, সমাজ ও পরিবারকে ভালো রাখতে। যে কারণে বেশিরভাগ নারী বিচার না চেয়ে আজীবন এই পাশবিকতার স্মৃতি  নিরবে বয়ে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।

একটা অপরাধ গোপন রাখলে আরো অপরাধের সূত্রপাত ঘটে, অপরাধের বিচারের বিলম্বে আরো অপরাধ সৃষ্টি হয়। তাই ধর্ষিতা নারী যেই হোক্ জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিবাদী হন। গোপনে ধর্ষণ হলে তা পরিবারকে অভিহিত করেন। কখনো নিজের ভুল থেকে কোনো অপরাধের সৃষ্টি যেনো না হয়। সেটার দিকে খেয়াল রাখবেন।

ধর্ষক আমাদের আশে পাশেই রয়েছে প্রকাশহীনভাবে অদৃশ্য মুখোশে অপকর্ম করছে। সময়ে তাঁদের রূপ বাহির হয় একাধিক অপকর্ম করে একটা অপকর্ম তাঁদের প্রকাশ পায়।

আমি মনে করি মানুষ ভালো ছিলো তা না, আগে প্রযুক্তি ও সোস্যাল নেটওয়ার্ক ছিলো না যে হুট করে অপরাধ প্রকাশ হবে তাঁর জন্য, পূর্বে খুব কম প্রকাশ পেতো-সব ধরণের অন্যায়। তাঁর মানে পূর্বে মানুষ ভালো ছিলো, তাই অন্যায় কম হতো, এটা কখনো না। পূর্বে মানুষ খারাপ ছিলো, আর এখনো মানুষ খারাপ আছে। কথাটা হলো! পূর্বে প্রকাশ পেতো কম, আর এখন প্রকাশ পায় বেশি এটাই পার্থক্য।

নারীদের পোষাক ও নারীদের রাত করে কেনো বাড়ি ফেরা এটা যদি ধর্ষণের কারণ হয়, তাহলে সিলেট এম.সি কলেজের দিনে দুপুরে স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ, আর নোয়াখালির ঘটনা ধর্ষকরা বাড়িতে গিয়েই ঘটিয়েছে সেটার কারণ কি? যাঁরা মিডিয়ায় নারীদের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন, আপনারা কেনো বলছেন না-নারী যেই ভাবে চলে না কেনো পুরুষের পাশবিকতার স্বীকার হয়ে ধর্ষিতা হচ্ছে নারীরা। কেনো নারীর পেটে জন্ম গ্রহণ করে নারীদের অপদস্থ করছেন? কেনো মনে করছেন না নারীরা জন্মদাত্রী প্রাণী, নবী, সাহাবায়ে ছিলাম ও পীর আউলিয়াদের মা। কেনো নারীদের ভোগের বস্তু ও গনিমতের ‘মাল’ মনে করেন! আর এই ‘মাল’দের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখতেই কতো আয়োজন, হোক্ সেটা পরিবার- রাষ্ট্র বা ধর্মের।

নারীদের নিজেদের নিরাপত্তার দ্বায়িত্ব নিজেরাই নিতে হবে, দেশের আইন ও মানুষ উল্টো তোমাদের নিয়ে তামাশা করবে- বিচার না করে। একবার ধর্ষণ হলে হাজারবার ধর্ষণের স্বীকার হতে হবে।

অতএব সাবধান! নিজেদের নিরাপত্তার দ্বায়িত্ব নিজেদের নিতে হবে, আর ধর্ষকদের মরণ আঘাত করতে হবে। প্রয়োজনে ভারতের ফুলন দেবির মতো প্রত্যেকটা বাংলার মেয়ে হতে হবে।

আমরা মায়েদের সম্মান চাঁই, ধর্ষণ নয়।

ধর্ষণের শাস্তি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড ও সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আইন চাঁই।

ধর্ষণের পর ধর্ষিতাকে যেনো বার বার বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা হতে না হয় সেদিকে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকা চাঁই।

কেউ যেনো স্বাধীন দেশে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেই স্বাধীন রাষ্ট্রের বিচার চাঁই আমরা।

পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে
মুক্ত হয়েও বন্দী মোরা।
এই তো মোদের স্বাধীনতা!
এ কেমন স্বাধীনতা।

ধন্যবাদ লেখা গুলো পড়ার জন্য ও শেয়ার করার জন্য।

Md Efaz
Web Developer
Narayanganj Bangladesh
I am a dedicated WordPress developer with 4 years of experience on Fiverr. I specialize in developing all kinds of websites and landing pages, ensuring they are professional, responsive, and visually appealing. My goal is to bring your vision to life, whether it's a business site, e-commerce store, portfolio, or any other web solution. Let's work together to create a website that perfectly fits your needs and stands out in today’s digital landscape.
 

Leave a Comment