গল্প
চিঠি
✍ লেখিকা সোনিয়া শেখ
আমার “খোকা” কেমন আছিস রে খোকা আমায় ছাড়া?আমি জানি ভালো নেই তুই। মা’কে ছাড়া কি কেউ ভালো থাকতে পারে? আমিও যে ভালো নেই তোকে ছাড়া।কতদিন হলো তোর মায়া ভরা মুখটা দেখি না। কত বছর কেটে গেলো তবুও যেন তোকে হারানোর যন্ত্রণা বার বার নতুনের মতো করে কুঁড়ে খায় আমায়।
জানিসতো খোকা, আজও মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তোর হাসিমুখের ওই ছবিটা বুকে নিয়ে ঘুমাই? তোর আব্বু তো প্রায় বকে আমায় কেন এত কাঁদি তোর জন্য?ও বলে তুই নাকি আমরা কাঁদলে কষ্ট পাবি। তাই তো তোর আব্বু শুধু বালিশে মুখ গুজে কাঁদে। আমায় বুঝতেই দেয়না ভেবেছে আমি বোকা সোকা তাইনা?কিন্তু আমিতো জানি ওর ও যে অনেক কষ্ট হয় তোর কথা মনে পড়লে।
আগস্টের এই ১৮তারিখ টা দেখলে আমার বুকের ভেতরটা কেমন মোচড়ে ওঠে। এই অভিশপ্ত তারিখেই তো আমি তোকে হারিয়েছিলাম। আমায় ক্ষমা করে দিস রে খোকা। আমি তোকে আঁকড়ে ধরেছিলাম বুকের মাঝে। কিন্তু যখন বাস টা খাদে পড়ে যায় ততক্ষণও তুই আমার বুকের সাথেই লেপ্টে ছিলি শুধু শ্বাস প্রশ্বাস চিরদিনের জন্য ছেড়ে দিয়ে। আমি চিৎকার করে কেঁদেছিলাম সেই চিৎকারে প্রকৃতিরাও সেদিন কেঁদে উঠেছিলো। অথচ তুই চোখ দুটো খুলে একবারও তাকালি না আমার দিকে। একটা মায়ের সন্তান হারানোর যন্ত্রণা সেদিন প্রকৃতিও বুঝি বুঝেছিলো।তোকে হারানোর জন্য সেদিন হাজার বার নিজেকে অপরাধী দাবী করি আমি। কিন্তু তোর আব্বু কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো আল্লাহ নিয়েছেন আমাদের বুকের ধন’কে আবার তিনিই দেবেন।
সত্যিই তোর আব্বুর কথা মিলেছিলো। আল্লাহ্ আবার আমায় সন্তান দিয়েছেন। তোর ছোট্ট একটা ভাই দিয়েছে আমাদের ঘরে।কিন্তু দিনশেষে তোর জায়গা টা শূন্যই থাকে রে খোকা। কেউ পূণ্য করতে পারে না।
জানিস খোকা আমি যখন তোর ছবিটা বুকে নিয়ে কাঁদি তোর ছোট্ট ভাইটা আমায় জড়িয়ে ধরে তোর মতো করে আদর করে দেয়। তবুও তোর আদর,চুমু,আম্মু ডাক টা কেন জানি না খুব খুব মিস করি।
কতদিন তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দেইনা। কতরাত বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় না। খুব মিস করিস আমায় তাইনা খোকা? খুব কষ্ট হয় আমার জন্য তোর? আমারও তো অনেক কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে তোর কথা এতো বেশি মনে পড়ে তখন খানিকের জন্য যেন বোবা হয়ে যাই। চোখের অশ্রু ছাড়া মুখে উচ্চারণ করার মতো কোনো ভাষা থাকে না আমার।
আল্লাহ কেন সন্তান দিয়ে আবার কেড়ে নেয় রে খোকা?আবার হয়তো সন্তান দেয় কিন্তু সেই হারানো সন্তান’কে কি ভোলা যায় কোনোদিন? ওই দহন টা যে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় সারাটাজীবন।
কতশত ডায়েরির পাতাগুলো যে ভরে গেছে তোকে লিখে লিখে কিন্তু তোকে পাঠানোর মতো কোনো নিয়ম এ জগতে নেই। লিখতে লিখতে মাঝপথে হাতদুটো কেঁপে ওঠে,বুকের মধ্যে জ্বালাপোড়া শুরু করে, চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝরে পড়ে। তবুও তোর নামে লিখতে ইচ্ছে করে আমৃত্যু।
চারিদিকে কেমন নিরবতা বিরাজ করছে এখন। রাতের শেষ প্রহর হতে চললো তবুও আমার চোখজোড়ার কোনো তাড়া নেই। জানালার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে কিছু তারার ঝলকানি দেখছি কলমটা থামিয়ে থামিয়ে।তুই কি আছিস খোকা ওই তারাগুলোর মাঝে? দেখতে পাচ্ছিস তোর আম্মু’কে?
জানি আমার কথাগুলো তোর দোরগোড়ায় কোনোদিনো পৌঁছাবে না। তাতে কি হয়েছে তুই তো আমার প্রতিটা মোনাজাতে আছিস খোকা। আল্লাহ্ তায়া’লা মায়ের দোয়া বিফলে দেবেন না কখনো।
ভালো থাকিস খোকা!
ইতি তোর
“আম্মু”
সমাপ্ত
ধন্যবাদ লেখা গুলো পড়ার জন্য ও লেখা ভালো লাগলে শেয়ার করবেন।