Thu, Nov 21, 2024

Have a Nice Day

0 comments 0 views
🕗: 4 minutes

লেখকঃ মাহিদুল ইসলাম আল্ মাহ্দী
লেখার তারিখঃ– ১৫১১২০২০ ইংরেজি

ভাই পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠ ছায়াগুলোর মধ্যে একটি। বাবার পর যে মানুষটির ছায়া বোনদের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সে হলো বোনটির ভাই। ভাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একটি নেয়ামতের মধ্যে একটি। যাঁর ভাই নেই সেই ব্যক্তিই একমাত্র ভাইয়ের গুরুত্ব বুঝতে পারে। বাবার পর বোনটি ভাইয়ের আশ্রয়স্থলে থাকার চেষ্টা করে। এবং বিপদে আপদে ভাইকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা করে, ভাই হলো পিতার পর বোনের অভিভাবক।
রাখাল ছাড়া গরু, অভিভাবক ছাড়া মেয়ে কিংবা নারী দুটিই অন্যোর কুদৃষ্টির স্বীকার।
তাঁদের মধ্যে পার্থক্য কি জানেন? রাখাল শুধু গরু হারায়, আর অভিভাবকহীন মেয়ে হারায় এই সমাজে আত্মসম্মান-আত্মমর্যাদা ও পরিশেষে হয়তো ইজ্জতটাও। এই সমাজে যে মেয়েটির অভিভাবক নেই সেই মেয়েটি বুঝতে পারে পৃথিবী কতো নিষ্টুর ও চিনতে পারে প্রকৃতির মানুষ রূপি প্রাণী গুলোর বহুরূপ।

যে পরিবারে শুধু মা-মেয়ে আছে-তাঁরা একা বসবাস করছে পরিবারে, বাবা জীবনের প্রয়োজনে প্রবাসে বসবাস করছেন, অথবা বাবা কোনো কারণ বসত মারা গিয়েছেন, তাহলে সেই পরিবারে অভিভাবক বলতে আর কেউ থাকলো না। আর্থিক অবস্থা ভালো থাকায় অথবা মেয়ের নানু বাড়ির আর্থিকতার সাহায্য পরিবার চলছে। অথবা কোনো না কোনো ভাবে পরিবার চলছে সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।
মনে রেখো! “এই পৃথিবীতে কেউ কখনো ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকবে ভেবে ততটা মারা যাওয়া না, মারা যায় যতটা দুশ্চিন্তা-কুদৃষ্টি ও প্রবঞ্চনার দ্বারা”
আমরা একটা অভিভাবকহীন পরিবার কে সাহায্য করার ক্ষেত্রে তাঁদের ইজ্জত নষ্ট করার চেষ্টা করি, তাঁদের কে হুমকি দামকি ডর ভয় দেখানোর চেষ্টা করি, এমনকি রাতে বাড়িতে ডিল মারতে–দরজায় ধাক্কা দিতেও দ্বিধাবোধ করি না।

মেয়েটিকে স্কুল কিংবা কলেজ থেকে আসার সময় ইভটিজিং করা, কিন্তু তাঁর হয়ে প্রতিবাদ করার মতো অথবা মেয়েটির সঙ্গে যাওয়ার মতো বাবা-ভাই অভিভাবক নেই। তাই এই রকম সমস্যায় হাজারো মেয়ের পড়াশোনা নষ্ট হয় এবং হাজারো মেয়ের স্বপ্নটাও, এর জন্য দায়ী কে হবে? মেয়ে’কে উত্তপ্ত করার ধরুণ মেয়ের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বাড়িতেই রাখবে মেয়ের ইজ্জত রক্ষার্থে মেয়েটির মা, মেয়েটির পড়াশোনার স্বপ্নটাও সেই বাড়িতেই মাটি চাঁপা হয়ে যাবে, এর জন্য দায়ী কে হবে? “আমি পুরুষ আমি মনে করি ভোগের জন্য সুন্দর কিংবা কালো সেটা আমার কাছে পার্থক্য না” আমি ভোগ করতে পারলেই যেনো শান্তি।
আচ্ছা শুনো!
তুমি কখনো তোমার মা’কে বোনকে স্ত্রী’কে মেয়েকে অন্যোর সাথে জিনা করতে কি কখনো দেবে অথবা চাইবে, উত্তর হবে নিজের জীবন থাকতেই কখনো না! যে চোখ তুলে থাকাবে তাঁকে হত্যা করবো আর না হয় সে হত্যা করবে আমাকে! তাহলে কেনো তুমি যা নিজের বেলায় দেখতে চাও না, নিজের পরিবারের সবাইকে ভালো রাখার জন্য একটি বৃক্ষ হয়ে ছায়ার মতো আগলে রাখতে চাও, তাহলে কেনো অন্যোর মা-বোন-স্ত্রী-মেয়ের প্রতি এই রকম সদয় আচরণ করতে চাও না?
কেনো ভাবতে পারো না তাঁরা কারো না কারোর মা, কারো না কারোর বোন, কারো না কারোর স্ত্রী, কারো না কারোর মেয়ে, তাঁদেরই সম্মান করা মানে আমাদেরই পরিবারের সম্মান।

আমরা যারা অভিভাবকহীন পরিবারে সাহায্য করার চেষ্টা করবো ভেবে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, বিপদে আপদে তাঁদের পাশে থাকবো বলে ছিলাম, কিছু দিন-কিছু মাস পরও তাঁরা আমাদের চোখেও কুদৃষ্টির স্বীকার হতে হয়, কিন্তু কেনো? আমরা “না” তাঁদের অভিভাবক হয়ে এসেছিলাম তাঁদের পরিবারে, তবে আজ কোনো নিজেই পথভ্রষ্ট সেই মানুষদেরই একজন হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করি এই পরিবারে অভিভাবকহীন একজন মেয়ের প্রতি।
আমরাই পুরুষ/আমরাই ছেলে। আমরা আবার কারো না কারো অভিভাবক হই এবং হওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমরা নিজের মা’কে বোনকে ভালো রাখার চেষ্টা করি এবং তাঁদের ইজ্জত রক্ষা ও অভিভাবক হওয়ার চেষ্টা করি পিতার অনুপস্থিতিতে, কিন্তু কেনো? আমরা অন্যোর অভিভাবকহীন পরিবারের প্রতি আমাদের এতো কুঞ্চিত দৃষ্টি ও খারাপ মনোভাব নিয়ে আচরণ করি!
কেনো নিজের পরিবার কে গাছ হয়ে ছায়া দান করো, যা অন্যোর পরিবারের প্রতি তুমি গাছ হয়ে ছায়া দান করতে অস্বস্তি বোধ করো। চরিত্র এতো নিম্নে ধাবিত করো না, অভিভাবকহীন দূর্বল পরিবারের প্রতি তোমার খারাপ বাসনা কামনা ধ্বংস করো। তাঁদেরকে সাহায্য করতে না পারলে তাঁদের ক্ষতি করার চেষ্টা করো না।

“একজন নারীর কাছে তাঁর ইজ্জতটাই পৃথিবীর সব চেয়ে দামী বস্তু এবং মূল্যবান সম্পদ, আর পুরুষের কাছে তা ভোগের বস্তু উপভোগের সম্পদ” এটাই কি?

অভিভাবকহীন পরিবারের প্রতি আপনার খারাপ আচরণে তাঁদের কি হতে পারে জানেন আপনি?

১. মেয়েটি স্কুলে যাওয়ার জন্য বাহির হলো আপনি তাঁকে রাস্তাঘাটে উত্তপ্ত করলেন, পরিবর্তিতে মেয়েটির প্রতিবাদের ভাষা দুর্বল হওয়াতে মা-মেয়েটির পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বাড়িতেই থাকতে বলেন, এতে মেয়েটির সুন্দর ছাত্র জীবন নষ্ট হলো ও ভবিষ্যত স্বপ্নটাও, এর জন্য দায়ী কে আপনি নন কি?

২. আপনি মেয়ের মা’কে উত্তপ্ত করলেন সম্পর্ক করতে চাইলেন, বদনাম করতে চাইলেন, তখন লোকে বলবে এই মেয়েটির মা ভালো নয়, তো মেয়ে ভালো হবে কেমনে, মেয়েটির জীবনের জন্য প্রভাব কে ফেলেছে আপনি নন কি?

৩. পড়াশোনা কম থাকাতে মেয়েটির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো তখন ভালো কোনো শিক্ষিত পরিবারের বিয়ের সমন্ধ হয়তো মেয়েটির জন্য আসবে না, মেয়েটি বিবাহিত জীবনেও হয়তো অশান্তিভোগ করবে, তাঁর জন্য দায়ী কে আপনি নন কি?

৪. অভিভাবকহীন পরিবারের প্রতি যে কোনো ধরণের উত্তপ্তই তাঁদের স্বস্তিত্ব কেড়ে নেয়, সুন্দর জীবন, সুন্দর দিন এমন কি ভবিষ্যত টাও ধ্বংস করে দেয়, প্রজন্ম থেকে কয়েক প্রজেন্মরই, ডিপ্রেশনের মধ্যে জীবনটা ধাবিত হয়ে যায়, কারণ যেই সময়টা কাজে লাগানোর ছিলো সেই সময়টা ছিলো তাঁর জীবনের জন্য কাল, তাঁর জন্য দায়ী কে? আপনি নন কি?

৫. মেয়েটির বিয়ে হলো পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো মেয়েটিও যুদ্ধ করতে করতে জীবন সংগ্রামে সফল হয়েছে পড়াশোনাও করেছে অভিভাবকহীন ভাবেই, কিন্তু আপনি বিয়ে করার পর চাইলেন সেই পরিবারের প্রতি প্রভাব বিস্তার করতে, কিন্তু কেনো? আপনি তো মেয়ের অভিভাবক হয়ে এসেছেন তাঁদের পরিবারের প্রতি প্রভাব বিস্তার করতে “তো” নয়। তো কেনো অধিকার খাটাতে গিয়ে তাঁদের পরিবারকে ডিপ্রেশনের মধ্যে রাখছেন?

সর্বশেষ একটাই কথা! অভিভাবকহীন পরিবারের প্রতি আপনার খারাপ আচরণে শুধু তাঁদের জীবনের প্রতি প্রভাব ফেলে না, তাঁদের কয়েক প্রজন্মর জীবনের প্রতি প্রভাব ফেলেও বটে। যেমনঃ- মা-মেয়ের ইজ্জত রক্ষার্থে কম বয়সে অন্য পুরুষের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো, মেয়েটির মা মেয়ের সম্মান রক্ষার্থে একজন অভিভাবক খুজলো এতো কিছু দেখলো না ও বেশি কিছু জানার চেষ্টাও করলো না সেই পুরুষের জন্য। কারণ মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দিলে যেনো মেয়েটির মা “শান্তি” তাঁর জন্য, কারণ মেয়েটির একজন অভিভাবক প্রয়োজন তাঁর জীবনের জন্য।

তাঁদের বিয়ে হলো! কিছু মাস কিছু বছর পর যা ঘটলো! মেয়েটির বয়স কম থাকাতে স্বামীর বয়সের সাথে মিল না থাকাতে মেয়েটির পাগলামী ও তাঁর মন বুঝছে না স্বামী, এবং মেয়েটিও তাঁর ছেলে মানুষি বয়স থাকায় স্বামীকে বুঝছে না। তাঁর কারণ মেয়েটির বয়স অনেক কম স্বামীর থেকে, অনেক সময় একে অন্যের বয়সের তফাতের কারণে সংসার ভাঙ্গে যায় পারস্পরিক না বোঝার কারণে। মেয়েটির সন্তান হলো, সে ছোট শিশু, স্বামী তালাক দিয়ে দিলো, বাচ্চা সহ সেই মেয়েটি কিভাবে জীবন চালাবে এবং এই বাচ্চার ভবিষ্যত কিভাবে উজ্জ্বল করবে। এর জন্য দায়ী কে হবে?মেয়ের জীবন ও পরিবর্তিতে মেয়ের সন্তানের জীবনের জন্য কি মূল সেই পুরুষেরাই কি দায়ী নয়!! যাঁদের কয়েক বছর আগের উত্তপ্ত করার দরুণ মেয়েটির জীবন আজ এই পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে।

কিন্তু কীভাবে তাঁরা দায়ী হয়– জেনে নিই!
মেয়েটি সঠিক বয়সে ঠিক মতো পড়াশোনা করতে পারেনি যাঁর জন্য ভালো চাকুরি করার যোগ্যতা নাই, নিজের যোগ্যতা গড়তে ও ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে নি। কম বয়সে বিয়ে হওয়ার দরুণ সংসার ভাঙ্গে যায়, একটা সন্তান নিয়ে সে এই কঠিন পৃথিবীতে কি করে চলবে, সে সন্তান কে কিভাবে মানুষ করবে, অভিভাবকহীন পৃথিবীতে এই অবস্থায় সবাই ভোগের বস্তু মনে করে সাথে থাকার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেও দিন শেষে কেউ কখনো প্রকৃত অভিভাবকের দায়িত্বে থাকে না।

খুব কম সংখ্যক পরিবার আছে যাঁরা এই পরিস্থিতিতে ভালো থাকতে পারে ও সন্তানদের মানুষ করতে পারে অভিভাবক ছাড়াই, পিতা কিংবা ভাই ছাড়াও মেয়েটি ভালো থাকে এবং মা ভালো জায়গায় বিয়ে দেয় তারাও সুখী হয়, কিন্তু যাঁরা এই পরিস্থিতিতে হেরে যায় তাঁদের জন্যেই আমার এই লেখা।

আসুন আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ভালো রাখতে মূল প্রজন্মদের সম্মান করি তাঁদের আশ্রয়স্থল হই বৃক্ষের মতো ছায়া দান করি বিনা পারিশ্রমিক কিংবা নিঃস্বার্থে।

সমাপ্ত

ধন্যবাদ সবাইকে লেখা গুলো পড়ার জন্য শেয়ার করার জন্য।

Md Efaz
Web Developer
Narayanganj Bangladesh
I am a dedicated WordPress developer with 4 years of experience on Fiverr. I specialize in developing all kinds of websites and landing pages, ensuring they are professional, responsive, and visually appealing. My goal is to bring your vision to life, whether it's a business site, e-commerce store, portfolio, or any other web solution. Let's work together to create a website that perfectly fits your needs and stands out in today’s digital landscape.
 

Leave a Comment