আপনারা বলতে পারেন? আমি কেনো বলেছি একজন আলেমর মৃত্যু মানে গোটা সমাজের মৃত্যু। তাঁর কারণ খুব সহজ, আল্লাহ্ তা’ য়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসুল পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন হেদায়েতের বার্তাবাহক হিসেবে ইসলামী দ্বীন কায়েম করার জন্য। হযরত আদম (আঃ) থেকে নিয়ে পৃথিবীতে যত নবী রসূল এসেছেন সবাই একটি কথার দাওয়াত দিয়েছেন আর সে কথা হলো “তাওহীদ বা আল্লাহর একাত্ববাদ”
আল্লাহ্ তা‘আলা যুগে যুগে অসংখ্য নাবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন যাতে মানুষ সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ বহুত্ববাদ বা শিরক মতবাদ বর্জন করে একত্ববাদ বা তাওহীদী মতবাদ গ্রহণ করে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই যাবতীয় ইবাদাত সম্পাদন করতে পারে।
হযরত নূহ (আঃ) এর দাওয়াতঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ إِنِّيَ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ “
নিশ্চয়ই আমি নূহকে তাঁর সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরণ করেছি, তিনি বললেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত কর। কারণ তিনি ব্যতীত তোমাদের সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। (নচেত) আমি তোমাদের জন্য কঠিন দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করছি।”
(সূরা আরাফ:৫৯)
হযরত নূহ (আঃ) এর দীর্ঘ সারে নয়শত বৎসরে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে রাতে দিনে সর্বদায় দাওয়াত ছিল শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর তাওহীদ বাস্তবায়ন করা।
হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর দাওয়াতঃ মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম (আঃ) গোটা জীবন তাওহীদ বা একত্ববাদের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে স্বীয় কাউমকে একই দাওয়াত দিলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَإِبْرَاهِيمَ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ اعْبُدُوا اللَّهَ
وَاتَّقُوهُ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ “
স্মরণ করুন ইবরাহীমের কথা, যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেনঃ তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাকে ভয় কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জেনে থাক।”
সূরা আনকাবুত: ১৬
হযরত হুদ (আঃ) এর দাওয়াত: আল্লাহ তা‘আলা হুদ (আঃ) এর তাওহীদের প্রতি আহ্বানের বর্ণনা দিয়ে বলেন:
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُوداً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ أَفَلاَ تَتَّقُونَ “
আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই হুদকে। তিনি বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন সত্যিকার মাবুদ নেই। তোমরাকি এখনও সাবধান হবেনা।”
সূরা আরাফ:৬৫
হযরত সালেহ (আঃ) এর দাওয়াত: সালেহ (আঃ) এর দাওয়াত সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
وَإِلَی ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ “
ছামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাঁদের ভাই সালেহকে তিনি বলেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত কর তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন সত্যিকার মাবুদ নেই।“
(সূরা আরাফ: ৭৩)
হযরত শুয়াইব (আঃ) এর দাওয়াতঃ আল্লাহ্ তা‘আলা শুয়াইব (আঃ) এর দাওয়াতের বর্ণনা দিয়ে বলেন:
وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ “
মাদয়ান সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ
করেছি তাদের ভাই শুয়াইব (আঃ) কে, তিনি বলেনঃ হে আমার সম্প্রদায়। তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন সত্যিকার মাবুদ নেই।
সূরা আরাফ: ৮৫
একই নিয়মে সকল নাবী ও রাসূল তাওহীদ বাস্তবায়ন উদ্দেশ্যে ও লক্ষ্য রেখে আল্লাহর প্রেরিত দূত হিসেবে স্বীয় দাওয়াত পরিচালনা করেন। এমনকি সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জীবনের সর্বস্তরে একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দাওয়াত পরিচালনা করেন। সর্বশেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) এর দাওয়াতের মূল লক্ষ্যবস্তু তাওহীদ বাস্তবায়ন এবং শিরক নির্মূল করা: বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পূর্ববর্তী সকল নবী ও রাসূলের দাওয়াতকে বিশ্বব্যাপী পূর্ণাঙ্গ রূপ দানের দায়িত্ব নিয়ে আবির্ভূত হলেন এমন এক সমাজে, যারা শিরক ও মূর্তিপূজা করতো, অন্যের তুলনায় উন্নত হলেও আত্মমর্যাদা ভুলে গিয়ে স্বীয় হস্তে তৈরী মাটি বা পাথরের মূর্তির কাছে মাথা নত করে বর্বর জাতিতে পরিণত হয়ে ছিল, তাঁরা ছিল বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। কিন্তু নবীদের একই সুত্রে গাঁথা নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁদের সে সব বহুত্ববাদ বর্জন করে দাওয়াত দিলেন একত্ববাদ বা আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের প্রতি তিনি নবী করীম (সাঃ) বললেন:
قولوا لا اله إلا الله تفلحون
তোমরা বল একমাত্র আল্লাহ ছাড়া
সত্যিকার ইবাদাতের যোগ্য কোন মাবুদ নেই, তাহলেই সফল কাম হতে পারবে।”
কেনইবা তিনি তাওহীদের দাওয়াত দিবেন না? এ মিশন নিয়েই তো তিনি এসেছেন, এ নির্দেশইতো পেয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ:
قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ مُخْلِصًا لَّهُ الدِّينَ – وَأُمِرْتُ لِأَنْ أَكُونَ أَوَّلَ الْمُسْلِمِينَ “
বল আমি আদেশ প্রাপ্ত হয়েছি আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য এবং আরো আদিষ্ট হয়েছি আমি যেন সর্বপ্রথম মুসলিম হই।”
সূরা যুমার: ১২
হযরত নবী করীম (সাঃ) তাঁর মাক্কা জীবনের গোটা তেরটি বছর একই কর্মসূচী সামনে রেখে দাওয়াতী কার্যক্রম চালালেন। কিভাবে মানুষকে শিরক হতে মুক্ত করে তাওহীদের পথে আনা যায়? এ দাওয়াতই সকাল সন্ধ্যায় দিতে থাকলেন। এমনিভাবে মদীনার জীবনের দাওয়াতও শুরু হল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ও শিরক মুক্ত করার মাধ্যমে। মদীনায় ইসলামী জীবনের সূচনা হল মিনার প্রান্তে বাইয়াতে আকাবার মধ্যদিয়ে। আকাবার প্রথম বাইয়াতে নবী (সা) মদীনাবাসীদের বলেছিলেনঃ تعالوا بايعوني على أن لا تشركوا با لله شيئا “
আসো তোমরা আমার সাথে অঙ্গিকার কর যে তোমরা আল্লাহর সাথে কোনরূপ শরীক স্থাপন করবেনা।
সহীহুল বুখারী হাদীস নং ১৮
এভাবেই শুরু হল মদীনার দাওয়াতী জীবন, সকল ক্ষেত্রে একই নির্দেশ, একই আদেশ, একই নির্দেশনা তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না। এমনকি মৃত শয্যায় থেকেও সতর্ক করছেন শিরক কার্মকান্ড হতে শিরকের সকল পথ ও ঘাট যেন নির্মূল করেই বিদায় নিতে চাচ্ছেন, তিনি বলছেন:
قاتل الله اليهود والنصارى اتخذوا قبورأنبيائهم مساجد – “আল্লাহ ঐ সব ইয়াহুদ ও নাসারাকে ধ্বংস করুন যাঁরা তাঁদের নবীদের কবরগুলিকে মসজিদে
পরিণত করে শিরকের কেন্দ্র করেছে।
মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৩২১।
নিজের কবরকে কেন্দ্র করেও নবী করিম (সাঃ) বলেন:
لاتتخذوا قبري وثنا يعبد “
তোমরা আমার কবরকে এমন প্রতিমা বানাইয়া নিও না যার উপাসনা করা হবে।”
(মুয়াত্তা মালিক)
সুতরাং নাবী (সা) এর দাওয়াতের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে তাওহীদ বাস্তবায়নই হল মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, এমন কি তিনি কাউকে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করলে প্রথমে তাওহীদের দাওয়াত দেওয়ারই নির্দেশনা দিতেন। দাঈদের কর্তব্য সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত প্রদান করা।
ইসলামের প্রতি দাওয়াত প্রদান একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই বরং প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তি স্বীয় যোগ্যতা ও দতা অনুযায়ী দাওয়াতী কাজে অংশ গ্রহণ করবে। এখন প্রশ্ন হল কোন বিষয়ের প্রতি দাওয়াত দিব? কেননা কেউ দাওয়াত দেয় স্বীয় দলের প্রতি, আবার কেউ দাওয়াত দেয় স্বীয় চিন্তা চেতনার প্রতি, আবার কেউ দাওয়াত দেয় আদব আখলাকের প্রতি, আবার কেউ দাওয়াত দেয় মতা অর্জনের প্রতি। আসলে দাওয়াতের বিষয়বস্তু হওয়া উচিৎ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ প্রেরিত নবী হিসেবে যে ইসলাম নিয়ে এসেছেন সেই পুর্ণাঙ্গ ইসলামের প্রতি।
প্রসিদ্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ নবী করিম (সাঃ) যখন মূয়ায বিন জাবাল (রাঃ)কে ইয়ামান দেশে দাওয়াতের জন্য প্রেরণ করলেন তখন তাঁকে বললেন:
فليكن أول ما تدعوهم إليه شهادة أن لا إله إلا الله وفي رواية أن يوحدوا الله فان هم أطاعوك لذلك فأعلمهم أن الله افترض عليهم خمس صلوات فى كل يوم وليلة
সর্বপ্রথম তোমার দাওয়াতের বিষয়বস্তু যেন হয় আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সত্যিকার কোন ইবাদাতের যোগ্য মাবুদ নেই এ স্যাপ্রদান করা, অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের বা একত্ববাদের প্রতি যেন তোমার সর্বপ্রথম দাওয়াত হয়, তাঁরা যদি তোমার এ তাওহীদের দাওয়াত পূর্ণভাবে মেনে নেয় অতঃপর তাঁদের জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা‘আলা– প্রতি রাত ও দিনে তোমাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছেন …। সহীহুল বুখারী হাদীস নং ১৪৫৮, সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৯ এ হাদীসে প্রমাণিত হয় য়ে দাঈ বা আহ্বানকারী সর্বপ্রথম তাওহীদ বা সহীহ আকীদার প্রতি দাওয়াত দিবে, কারণ আকীদা সংশোধন বা শুদ্ধ করণ ছাড়া কোন ব্যক্তির ঈমান সঠিক হতে পারেনা, আর ঈমান সঠিক না হলে অন্য কোন ইবাদাত গ্রহণ যোগ্য হবে না।
আজ এই কথা আমাদের শেষ নবীর উম্মতকে কে বোঝাবে? আজ তো নবী রাসূল ও সাহাবায়ে কেরাম নেই।
তাই সেটাও নবী করিম (সাঃ) সারে চৌদ্দশ বছর আগে বলে গেছেন।
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর ওফাতের মাধ্যমে নবুওতের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। দুনিয়াতে আর কোনো নবী-রাসুল আসবেন না। তবে নবীজির রেখে যাওয়া সেই ‘নবুওতি দায়িত্ব’ পালন করবেন আলেম-ওলামাগণ। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে ওলামায়ে কেরাম হচ্ছেন নবীগণের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ দিনার ও দেরহামের উত্তরাধিকারী বানান না। তাঁরা ইলম ও জ্ঞানের উত্তরাধিকারী বানান।
(আবু দাউদ : ৩৬৪১)।
আর যাঁদের নবুওতের ইলম দেওয়া হয় তাঁদের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যাঁরা ঈমানদার এবং যাঁরা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ্ তাঁদের উচ্চ মর্যাদা প্রদান করেন।
(সুরা মুজাদালা : ১১)
আলেমরাই হচ্ছেন পৃথিবীর সর্বোত্তম মানুষ। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে নিজে কোরআন শিখে এবং অন্যকে তা শিখায়।
(তিরমিজি : ২৯০৭)
ওলামায়ে কেরাম হচ্ছেন পৃথিবীর বুকে হেদায়েতের বাতিস্বরূপ। এই হেদায়েতের বাতি যে দিন বন্ধ হয়ে যাবে, সে দিন পৃথিবী অজ্ঞতার আঁধারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওলামাদের দৃষ্টান্ত ওইসব তারকার মতো যাদের দ্বারা স্থলে ও জলের অন্ধকারে পথের দিশা পাওয়া যায়। আর যখন তারকাসমূহ আলোহীন হয়ে যায় তখন পথচারীর পথ হারাবার সম্ভবনা থাকে।’
(মুসনাদে আহমদ : ৩/১৫৭)।
অর্থাৎ ওলামায়ে কেরাম পৃথিবীতে না থাকলে মানুষের পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। সুতরাং আলেমরা হচ্ছেন উম্মতের হেদায়েতের আলোকবর্তিকা।
একজন আলেমের মৃত্যু উম্মতের জন্য ধ্বংসের কারণ। কেননা একজন আলেমের মৃত্যুতে উম্মতের জন্য যতোটা দ্বীনি ব্যাপারে ক্ষতি হয় একটি গোত্রের সব মানুষ মৃত্যুবরণ করলেও সেই ক্ষতি হয় না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আলেমদের মৃত্যু এমন মুসিবত যার প্রতিকার নেই এবং এমন ক্ষতি যা পূরণ হয় না। আর আলেম এমন এক তারকা যে (তার মৃত্যুর কারণে যেন পৃথিবী) আলোহীন হয়ে যায়। একজন আলেমের মৃত্যু অপেক্ষা একটি গোত্রের মৃত্যু অতি নগন্য।
(বায়হাকি : ২/২৬৪)
সুতরাং আলেমরা দুনিয়াতে না থাকলে ইলমও দুনিয়াতে থাকবে না। কেননা আলেমদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া থেকে ইলেম উঠিয়ে নেন। আর ইলেম যদি দুনিয়াতে না থাকে তাহলে মানুষ হেদায়েতের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গোমরাহের দিকে ধাবিত হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা (শেষ জামানায়) ইলেমকে এভাবে উঠিয়ে নেবেন না যে, লোকদের অন্তর থেকে সম্পূর্ণ বের করে নেবেন বরং তিনি ইলমকে এভাবে উঠিয়ে নেবেন যে, এক এক করে ওলামায়ে কেরামদের উঠিয়ে নেবেন। আর যখন কোনো আলেম দুনিয়াতে অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা ওলামাদের পরিবর্তে অজ্ঞ ও মূর্খ ব্যক্তিদের নেতা বানিয়ে নেবে।
(বুখারি : ১০০)
বর্তমানে না জানার কারণে আলেমদের অনেক সময় অবজ্ঞা ও তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা হয়। অথচ আলেমদের সম্মান আল্লাহর কাছে এত বেশি, আসমান ও দুনিয়ার সব মাখলুক আলেমদের জন্য দোয়া-মাগফেরাত কামনা করতে থাকে। নবী করীম (সাঃ) বলেছেনঃ আলেমদের ওপর স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ এবং আসমান ও জমিনের সব মাখলুক এমনকি পিঁপড়া আপন আপন গর্তে এবং মাছ পানির ভেতর আপন আপন পদ্ধতিতে রহমতের জন্য সর্বদা দোয়া করতে থাকে।
(তিরমিজি : ২৬৮৫)
তাই আমরা নিজেদের স্বার্থের জন্য নবীগনের উত্তরসূরিদের বিরুদ্ধাচরণ না করি, তাঁদেরকে অসম্মান না করি, মনে রেখো আল্লাহর আযাব বড়ো নিষ্টুর।