Thu, Nov 21, 2024

Have a Nice Day

0 comments 0 views
🕗: 5 minutes

পরিবারের বাবা-মা জানেন পরিবারের ছেলে সন্তানদের শিক্ষিত করা ও বড় করা কতটা কষ্টের! ও সন্তানদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা কতটা কষ্টের। কিন্তু সেই সন্তান বড় হয়ে যখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে তখন কি’বা বলার থাকে।

আমি বলছিলাম দিহানের কথা। দিহানের মা-বাবা ভাই বোন সবাই ছিলো! দিহানের বাবা দিহানকে পড়াশোনা করান, ভাইয়েরা সবাই ছিলো বেকার, বাবা পরিবার চালাতেন। তাই বাবা ভাবলেন দিহানকে পড়াশোনা করিয়ে ভালো একটা দেশে পাঠাবেন পরিবর্তিতে নিজের পরিবারের হাল ধরবে ও ভাই/বোনদের একটা দিক লাগাবে। এই স্বপ্ন ও চিন্তা ভাবনা নিয়ে বাবা দিহানকে বেচে নিলেন! যেহেতু সে পড়াশোনা করেছে ও বাবার কাছে তাঁকে কর্মিট মনে হলো তাঁর জন্য।

বাবা পড়াশোনার জন্য দিহানকে বিদেশে পাঠালেন টাকা পয়সা খরচ করে। ভাই বোন কতখুশি! যে আমার ভাই বিদেশে যাচ্চে আমাদের পরিবার ও বাবার হেল্প হবে এই ভেবে। দিহান বিদেশে গেল! ভার্সাটিতে নিয়মিত ক্লাস করে সে! এবং ক্লাসের ফাঁকে কাজ করে এই ভাবে চলতে লাগে তিন বছর, সে তাঁর নিজের খরচ ভার্সাটি ফি সহ সব নিজেই রোজগার করে দিত, এবং তাঁর সাথে প্রত্যেক মাসেই বাড়িতে কম বেশী টাকা পাঠাতো।


দিহানের পড়াশোনা শেষ হলো! সে এখন একটা ভালো চাকুরি খুঁজছে বিদেশের মাঠিতে। আর এদিকে ভাই/বোন কত খুশি যে দিহান ভালো চুকুরি করবে আমাদের ইচ্ছা গুলো পূরণ হবে। টাকা পয়সার জন্য দেশে কিছু করা যাচ্ছে না আমার ভাই ভালো জব পেলে সে আমাদের টাকা দেবে তখন আমরা আর দেশে বেকার থাকবো না। এবং বোনদেরও ধুমধাম করে বিয়ে দেবো।

সত্যি কথা বলতে পরিবারের একজন ভালো একটা দেশে থাকলে এবং চাকুরি করলে পরিবারের সবাই আশা করে তাঁর প্রতি। সেই আশাটা হলো রক্তের সম্পর্কের জন্য! দিহানের প্রতি সেই দিক থেকেই আশা আর ভরসা ছিলো পরিবারের সবার।

দিহান অবশেষে একটা চাকুরি পেল! চাকুরি করতে লাগলো সে। এবং মাসে-মাসে টাকা বাড়িতেও পাঠাতো, এই ভাবে চলতে লাগলো আরো দু বছর।


তাঁর মধ্যে দিহান বিয়ে করবে! যেহেতু সে ছিল সবার বড় তাই পরিবারের আপত্তি নেই সে বিয়ে করতে। সে দেশের মেয়েকে বাহিরা দেশে বিয়ে করলো; সংসার হলো! এর মধ্যে বোন একজনের বিয়ে হলো। ভাই একজন মুদির ব্যবসায় মন দিল। তখন তাঁদের পরিবার সুন্দর চলছিলো। কিন্তু ভাই মুদির ব্যবসা বেশী দিন করতে পারেনি, লোকসান হলো তাঁর জন্য।

আর এদিকে দিহান আর আগের দিহান থেকে পরিবর্তন হতে লাগলো! বাবা-মা দিহান কে টাকার জন্য বললে দিহান রাগ করে কথা বলে; সব সময় টাকা, ‘সব সময় টাকা’ আমার ভালো লাগে না শুনতে! আমার কাছে টাকা নেই! আমি এখন পারবো না টাকা দিতে, তোমার ছেলে মেয়ে তুমি জন্ম দিয়েছ, তুমি জানো! তুমি তাঁদেরকে কি করবে আর না করবে! যদি না পারো জন্ম দিয়েছে কেন? আমি তোমার ছেলে মেয়ের পারবো না দায়িত্ব নিতে আমার কাছে টাকা নেই। অনেক টাকা দিয়েছি, এই ভাবে দিহান বাবা-মার সাথে কথা বলতে লাগলো? ভাইয়েরা মাঝে মধ্যে দরকারে ফোন দিলে ভালো মন্দ কথা বলে দিহান ফোন রেখে দিত সে ব্যস্ত এই বলে। তাই ভাইয়েরা আর তাঁদের দরকারি কোনো কথা বলতে পারে না! আর যদি দিহানের ভাইয়েরা কেউ কোনো কিছু করবে দেশে এই বলে দিহানের কাছে টাকা চায় তো, দিহান বলে আমার কাছে টাকা পয়সার জন্য ফোন দিয়ো না, আমি এক পয়সাও দিতে পারবো না, এই বলে ফোন কেটে দেয়।


কয়েক দিন পর বাবা দিহানকে ফোন দিয়ে মেয়ের বিয়ে দেবে ও ছেলেদের একটা দিক লাগাতে টাকা চেয়েছেন! দিহান বলেছে টাকা নেই। বাবা বলেছেন আমার একটা জায়গাটা আছে এই জায়গা বাহিরা মানুষের কাছে বিক্রি করলে আমার সন্তানরা আর সেই জায়গায় বল করতে পারবে না। যদি তুই এই জায়গাটা নিয়ে আমাকে কিছু টাকা দিতে তাহলে নিজেদের মধ্যে জায়গাটা থাকলো! আর আমাদেরও টাকা পেলে কাজ চলতো। দিহানকে অবশেষে বাবা রাজি করালেন, দিহান জায়গাটি কিনবে! তবে অন্য মানুষে থেকে দর কম নিয়েই বাবা দিহানের কাছে জায়গাটি বিক্রি করলেন। এইভাবে দিহান বাবার কাছ থেকে বাবার জায়গাটি কিনে বাবাকে টাকা দিত। বাবা টাকা পেয়ে নিজের পরিবারের জরুরত সমাধান করার চেষ্টা করতেন। যেহেতু পরিবারের তেমন রোজগার নেই। তাই বড় কোনো কিছু করতে হলে অবশ্যই এটাই করতে হতো বাবার। আর পরিবারের সবাই যখন বড় হয় তখন খরচ টাও বাড়তে লাগে।

দিহানের কাছে বাবা জায়গাটি বিক্রি করতেন কারণ অন্য কেউ মনে করবে তাঁদের জায়গা নিজেদের মধ্যে রয়েছে তাঁর জন্য। যদি অন্য কারোর কাছে জায়গাটি বিক্রি করি তবে মানুষে জানাজানি করবে এই লজ্জা দিহানের বাবা ভাবতেন। লোকজনে যদি জানে আমি জায়গা বিক্রি করছি এই ভাবে-তাহলে সেটা লজ্জার; এটাই ভাবতেন সব সময় দিহানের বাবা। তাই এই ভেবে দিহানের কাছে জায়গা বিক্রি করতেন, অন্য লোকের কাছে জায়গা বিক্রি না করে।


একদিন দিহানের ভাই দিহানকে ফোন দিল! এবং বললো ভাই আমি বিদেশ যাবো! যদি তুমি কিছু টাকা দিয়ে আমাকে এখন সাহায্য করতে তাহলে আমি বিদেশে যেতে পারতাম। আমি রুজি করে তোমার টাকা ফিরিয়ে দেবো! দিহান জবাবে বললো! আমার কাছে টাকা নেই, তুই তোর সম্পত্তি তোর ভাটে যা পাবি তা বিক্রি করে যা, তোর সম্পত্তি তোর ভাই/বোন খাবে তুই বিক্রি করে বিদেশে যা। আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা নেই। আর আমি এক পয়সাও দিতে পারবো না! এই বলে দিহান ফোন কেটে দিয়েছে। ছোট ভাই মনে কষ্ট নিয়ে ফোন রেখে দিল।

এই ভাবে দিহানের কাছে পরিবারের মা-বাবা ভাই/বোনা অশান্তি পেতে লাগলো, তাঁকে পড়াশোনা করিয়েছিলেন, কিন্তু পড়াশোনার কোনো আচরণ ছিলো না পরিবারের সদস্য ও মা-বাবার প্রতি দিহানের।

টাকা পয়সা পেয়ে দিহান নিজের পরিবারকে ভুলে গেছে! মা-বাবাকে গালাগালি ও ভাই/বোনদেরও গালাগালি করতো, দিহানের রাগ উঠলে। পরিবারের কেউ শান্তি পেত না দিহানের সাথে কথা বললে। সে পরিবারের কষ্টের সময়ও আঘাত দিয়ে কথা বলতো পরিবারের মানুষের সাথে। যদি কোনো সময় বাড়িতে টাকা দিত তাহলে অনেক কথা পরিবারের মানুষকে শুনতে হতো! আর পরিবারের মানুষ শুনতো। কারণ! তাঁরা অসহায় ছিলো তাঁর কাছে। বাবা-মা’রও একসময় দিহানের সাথে ভয়ে ভয়ে কথা বলতে হতো। এই রকম পরিস্থিতি ছিলো তাঁদের মধ্যে।


টাকা পয়সা হলে নিজেকে স্বার্থপর করতে ইচ্ছা করে! কিন্তু কেন? টাকা পয়সা তো পৃথিবীর সব কিছু না। টাকা পয়সা একটা বিন্দুমাত্র রোগ শিফা করার ক্ষমতা নেই যদি সৃষ্টিকর্তা না চান। তবে কেনো টাকা পয়সা হওয়ার পরে রক্তের সম্পর্ক ও পিতা-মাতার প্রতি অসৎ আচরণ করার।

ছেলে যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয় তবে সে যদি পৃথিবীর সেরা ধনীও হয়, তারপরেও সে মা-বাবার সাথে কথা বলতে গেলে খেয়াল রাখবে, তাঁর কথায় যাতে মা-বাবা কষ্ট না পান। কারণ সেখানেই তাঁর জন্য স্বর্গ নিহিত রয়েছে তাঁর জন্য।

ছেলে যদি মনে করে পৃথিবীর ধন ধৌলত তাঁর কাছে অধিক প্রিয় তাহলে সে নিজেকে স্বার্থপর করে তুলবে নিজের জন্য। তাঁর আচরণ কখনো ভালো হবে না, ও পরিবারের সাহায্যের কথা সে মাথায় রাখবে না। কারণ তার কাছে পিতা-মাতা স্বর্গ নয় এই পৃথিবীটাই স্বর্গ।


পিতা-মাতা সন্তানকে স্নেহ করে কষ্ট করে লালন পালন করে মানুষ করেছেন যখন সন্তান আর্থিক ভাবে টাকা পয়সার মালিক হয়, তখন পিতা-মাতা তাঁর সাথে ভয়ে ভয়ে কথা বলে, যাতে সে রাগ না করে। সন্তান যদি সুশিক্ষিত হয় তাহলে সে ভয়ে ভয়ে কথা বলবে আমার পিতা-মাতা যাতে আমার কথায় কষ্ট না পান সেদিকে খেয়াল রেখে।

যে সন্তান দিহানের মতো নিজেদের পরিবারের সাথে স্বার্থন্বেষী আচরণ করে! পরিবারের স্বায়সম্পত্তি কিনে পরিবারকে টাকা দেয় পিতা-মাতা থাকার পরেও, তাঁকে পরিত্যাগ করুন।

আমরা সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনার মাধ্যমে কোনো কিছু চাই! এবং আশাকরি তিনি আমাদের নিরাশ করবেন না এই ভেবে। ঠিক তদ্রূপ! মানুষ সে ব্যক্তির কাছে চায় যে ব্যক্তির কাছে সে আশা করে। সে হোক রক্তের সম্পর্ক কিংবা বন্ধনের সম্পর্কের মানুষ গুলো কাছে চাওয়া। সৃষ্টিকর্তার নিকট বান্দা আশা করে যখন তাঁর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয় না। ঠিক তুমিও তাঁর চাওয়া কম বেশ রক্ষা করো। কারণ! সে পাবে বলে আশা করিছিলো তোমার কাছে। তুমি তাঁকে নিরাশ করো না। আর কারোর মন ভাঙ্গা মানে মসজিদ ভাঙ্গার সমান।

আমরা কেনো মনে করি রক্তের সম্পর্ক হচ্ছে এ পৃথিবীর সবচাইতে মজবুত সম্পর্ক? আমাদের পরিবার তথা পারিবারিক আত্মীয় সম্পর্ককে কেনো মনে করি তাঁরা হলো আমাদের সব চাইতে রক্তের সম্পর্কের মানুষ গুলোর মধ্যে প্রিয়জনরা? রক্তের সম্পর্ক ছাড়া কি কারোর সাথে মজবুত সম্পর্ক হয় না? সত্যিই কি আমরা শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্ক ছাড়া কেউ কখনো কারোর প্রিয়জন বা আপনজন হই না অথবা ভাবতে পারি না? কিন্তু কেনো? আমরা কি এই পৃথিবীটা দেখছি না, এবং দেখছি না রক্তের সম্পর্ক মানুষ গুলোই বেশী আঘাত করে ভিতরে ও বাহিরে।

মনে রেখো! রক্তের সম্পর্ক ও পারিবারিক সম্পর্ক আছে বলেই সকলই প্রিয়জন নয়। পরিবারের মধ্যে এমনও মানুষ আছে যাঁদের সঙ্গ ত্যাগ করাই ভালো। কারণ এই মানুষ গুলো জীবনে বপন করে দেবে অশান্তির বীজ, এবং দিয়ে দেবে মানুসিক দুঃশচিন্তা। কিন্তু এই ভূমণ্ডলে সব মানুষ এবং সব রক্ত ও পারিবারিক সম্পর্ক এক রকম হবে তা আমি বলি না। আপনাকে বুঝতে হবে, আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে! জীবনে কার সাথে সম্পর্ক রাখা উচিত্ এবং কার সাথে সম্পর্ক রাখা অনুচিত। আমি আজ এই গল্পে বললাম দিহানের কথা! যে সম্পর্ক রক্তের ছিল! পরিবারের সবাই থাকে আপন মনে করেছিলো এবং আশা করেছিলো। কিন্তু বিনিময়ে পরিবারের ভাই/বোন মা-বাবা মানসিক কষ্টটাই পেয়ে ছিলেন, দিহানের থেকে। তাই এই রকম পরিবারে জন্ম হওয়া সব স্বার্থপরদের সঙ্গ ত্যাগ করা এবং নিজেরাই ভালো থাকার চেষ্টা করাই শ্রেয় ও বুদ্ধিমত্তার কাজ।

 স্বার্থপর কেন হয় রক্তের সম্পর্ক
লেখকঃ- মাহিদুল ইসলাম আল মাহদী
লেখার তারিখঃ- ০৬-০৫-২০২১ ইংরেজি 

Md Efaz
Web Developer
Narayanganj Bangladesh
I am a dedicated WordPress developer with 4 years of experience on Fiverr. I specialize in developing all kinds of websites and landing pages, ensuring they are professional, responsive, and visually appealing. My goal is to bring your vision to life, whether it's a business site, e-commerce store, portfolio, or any other web solution. Let's work together to create a website that perfectly fits your needs and stands out in today’s digital landscape.
 

Leave a Comment