আমার এবং আমাদের মধ্যে পার্থক্য কি?
আমরা যদি কোনো কিছু করার চেষ্টা করি, আর সেটা যদি আমার মনে না করে আমাদের মনে করি, তবে সেটা এতো সহজে করা হবে না, এমন কি হবেও না।
আপনাদের বোঝানোর উদ্দেশ্য আমার কিছু কথা।
এক ঘরে চার সন্তান ছিলো, মা রান্না করবে, কিন্তু মরিচ আর লবন নেই, সঙ্গে শাক সব্জি তো লাগবেই। মা এক সন্তানকে বললো তুমি এই গুলো আনতে হবে রাতের খাবারের জন্য, তো সেই সন্তান বললো আমি না আমার ভাই অমুক আনবে, সে অমুক কে বললো তুমি রাতের জন্য এই গুলো খরচ আনতে হবে। তো সে বললো আচ্ছা আমি “না” আমার ভাই “তমুক” সে এই খরচ গুলো আনবে, আমি তাঁকে বলবো। এই ভাবেই খরচের ধাক্কাধাক্কি করতে গিয়ে কেউ আর রাতের জন্য কিছু আনলো না। দিন শেষে সবাই খালি হাতে ফিরে এসেছে বাড়িতে। তাঁর কারণ একটাই দায়িত্ব টা “আমার” ছিলো না, আমাদের ছিলো।
যদি সন্তানরা দ্বায়িত্ব টা আমার মনে করতো, এবং রাতের খাবারের জন্য এই খরচ গুলো আনতে হবে ভাবতো, তবে প্রথম অথবা দ্বিতীয় সন্তানই আনতো, দিন শেষে কেউ উপোস থাকতে হতো না।
“এটাই হলো আমার আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য”
দেশ আমার “আমাদের না” এই কথা দেশের সব নাগরিকদের মনে করা উচিত্ কি?
হ্যাঁ অবশ্যই উচিত্! দেশের ভাবমূর্তি, দেশের সার্বভৌমত্ব, দেশের সম্মান ও দেশ প্রেম রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। সেটা মনে করতে হবে।
আপনি যেই হোন না কেনো দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করা আপনার দায়িত্ব। নিজের অবস্থান থেকে সক্রিয় হোন, দেশ প্রেম রক্ষা করুন।
ব্যক্তি ভুল করতে পারে রাষ্ট্র নয়, জন্মভূমি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্য রাষ্ট্রে বসে ষড়যন্ত্র করা সেটাকে দেশ প্রেম বলে না! আর সে ব্যক্তিই কোনো রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না। “কারণ” সে নিজের জন্মভূমি রাষ্ট্রকে ছোট (ষড়যন্ত্র) করে অন্য রাষ্ট্রে উড়ন্ত ভাবে আশ্রয় পাওয়া “নাগরিক” সে কিভাবে বর্তমান আশ্রয়স্থল রাষ্ট্রকে ভালোবাসে? যে নিজের জন্মভূমি রাষ্ট্রকে নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
জন্মভূমি রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা নাগরিকদের কর্তব্যে। আপনার আচরণে যাতে রাষ্ট্রের সুনাম নষ্ট না হয় সে দিকে খেয়াল করে অবশ্যই চলতে হবে। দেশ অথবা বিদেশে অবস্থানরত রাষ্ট্রের মানুষেরা।
আপনার খারাপ কর্ম কিভাবে একটা জেলা ও রাষ্ট্রের উপর প্রভাব ফেলে তা অবশ্যই দেখুন!
আমার গ্রামে আমি একটা ধর্ষণ অথবা হত্যা করলাম কাউকে, যখন গ্রামের বাহিরে সে ঘটনা লোকজন জানবে সেটাকে বলবে এই ইউনিয়নের এই গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। তাঁর দূর যখন লোকজন জানবে, তখন বলবে এই থানাতে এই ঘটনা ঘটেছে! এবং তাঁর দূর যখন লোকজন জানবে-তখন খবরের হ্যাডলাইনে বড় করে জেলার নাম উল্লেখ করে নিচে আর্টিক্যাল টা লেখা হবে।
দেশের মধ্যে গ্রামের ভিতরে আপনার খারাপ কর্মের ধরুন একটা ইউনিয়ন, থানা ও জেলা কে কলঙ্কিত করতে পারে, সেই ঘটনা যখন আন্তর্জাতিক নিউজে প্রকাশিত হবে তখন হ্যাডলাইনে লেখা হবে (One person has been raped or killed in this district of Bangladesh) কারণ বাহিরা দেশে আপনার গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা ও জেলা চিনবে না, চিনবে আপনার দেশ।
এমনকি আপনি বাহিরা দেশে অবস্থানরত অবস্থায় কোনো অন্যায় করলে সেটা আপনার রাষ্ট্রকে কলঙ্কিত করবে। আর আপনার জন্য আপনার জন্মভূমি রাষ্ট্রের অবস্থানরত প্রবাসী ভাই/বোনদের উপর আপনার অপকর্মের প্রভাব ফেলবে।
তাই আপনার খারাপ কর্মে কিভাবে একটা রাষ্ট্র ও জাতির উপর প্রভাব ফেলবে তা অবশ্যই দূর চিন্তা করা উচিত্। এবং জন্মভূমি রাষ্ট্র ও বিভিন্ন দেশের আশ্রয়স্থল রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং সে সব রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে কাজ করাই আমার ধর্ম ও কর্তব্য মনে করা উচিত্।
নির্বাচনে ও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বাহিরা দেশের রাষ্ট্র ও বাহিরা দেশের মিডিয়ার মাধ্যমে কি দেশের উপকার না অপকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি?
অবশ্যই পররাষ্ট্র নীতি ও কূটনৈতিক চালে উপকারের চেয়ে অপকার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আপনি বিভিন্ন দেশ ফ্লো করে দেখবেন, বাহিরা দেশের হস্তক্ষেপের কারণে একটা রাষ্ট্র ও সেই রাষ্ট্রের মানুষদের জীবন কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে! এবং সেই রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা কোথায় এবং কোন পর্যায় হয়েছে।
বাহিরা দেশের হস্তক্ষেপ ও নিজের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা নাক গলানো দেখে অবশ্যই এক শ্রেণীর লোকদের ভালো লাগে! কিন্তু তাঁরা সেই রাষ্ট্রেরই লোক যাঁদের বাহিরা রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ভূমিকা দেখতে অপেক্ষা করে ও দাওয়াত করে আনে নিজ গৃহে প্রবেশ করায়, তারপর নিজেই একদিন আফসোস করে।
বর্তমান ভাইরাল হওয়া আল জাজিরার নিউজ দেখেছি! কাতার-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার এই অনুসন্ধানে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের পরিবারের সদস্যদের অতীত এবং বর্তমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়, এবং নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়। আমরা সবাই কম বেশি সে ১ ঘন্টা ২১ সেকেন্ডের ভিডিও দেখেছি।
‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ নামের এই প্রতিবেদনটি গতকাল প্রথম প্রচার করার পর থেকে এটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা চলছে।
এখানে অপরাধী যাঁরা হয় না কোনো তাঁরা পলাতক! এবং তাঁদের মনগড়া কথাবার্তা শুনে আমরা বিচার করতে পারি না দেশের সরকার কে নিয়ে। তাঁরা এক সময় রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছিলো, তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফটো থাকতে পারে “স্বাভাবিক”। তাই বলে তাঁর খারাপ কর্মের ভাগ অন্যের উপর চাপানো ও সরকারের মানক্ষুন্ন করা ও রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্ত ছড়ানো ঠিক হচ্ছে না,
সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের পরিবারের সদস্যদের অতীত এবং বর্তমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা তাঁদের উদ্দেশ্য নয় শুধু মাত্র।
যাঁরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী তাঁদের বিচার চাঁই, তবে অবশ্যই বাহিরা দেশের লক্ষ্য হাসিল না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা চাঁই।
তাই দেশের নির্বোধ জনগণের মতো না হয়ে সচেতন জনগণ হোন, আর সেই সব সচেতন জনগণের হাতে রাষ্ট্র নিরাপদ ও রাষ্ট্র দীর্ঘস্থায়ী হিসেবে গঠিত হয়।
দেশ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তাই দেখে দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র শুরু হচ্ছে, এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই আমরা, দেশের উন্নয়ন কে অব্যাহত রাখতে ষড়যন্ত্রের শেকল ভেঙ্গে দেওয়াই নাগরিকদের কর্তব্যে।
মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থান সেটা কি বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমাধানে ভূমিকা রাখবে?
উত্তর হবে “না”! আমরা বাহ্যিক দৃশ্যে না দেখে গোপন দৃশ্যে নিয়ে একটু ভাবি। ক্ষমতা হারানো অং সান সু চির আড়ালে থেকেই সেনাবাহিনী এতদিন সব করছিল, এখন তারা সামনে এল, পার্থক্য কেবল এটা। রোহিঙ্গা বিতাড়িত করা ও হত্যা করা সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘন করা, মূলত গোপনে সেনাবাহিনী ছিলো, যাঁর ধরুন আমরা তাঁদের থেকে রোহিঙ্গা সমাধানে আশা রাখতে পারি না।
মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, সেনাবাহিনী যদি মনে করে দেশে বা দেশের কোনো অঞ্চলে নিরাপত্তার হুমকি তৈরি হয়েছে, তাহলে তাঁরা পুরো দেশের বা ঐ নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রশাসন চালানোর অধিকার নিয়ে নিতে পারবে।
যখন ১০ লক্ষ্য রোহিঙ্গা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়ে ঘর বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলো, এবং অনেক রোহিঙ্গা হত্যা ও ধর্ষণ হলো মিয়ানমারে, তখন কি মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘন হলো না? তখন কোথায় ছিলো মিয়ানমারের শান্তিপ্রিয় সেনাবাহিনী? আজ যাঁদের হাতে মিয়ানমারের শাসন দখলে আমরা বাংলাদেশিরা রোহিঙ্গা সমাধান ভাবছি হবে।
মূলত মিয়ানমারের অং সান সু চি বাহ্যিক ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করলেও তাঁর আড়ালে সেনাবাহিনীই ছিলো, যা এখন প্রকাশ হলো। সামনের আবরণ সরে গিয়ে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে।
১৯৬২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সামরিক সরকার শাসন করেছে দেশটি।
গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে বছরের পর বছর ধরে প্রচারণা চালিয়ে এসেছেন অং সান সু চি। ২০১০ সালে ধীরে ধীরে ক্ষমতা ছাড়তে শুরু করলেও সামরিক বাহিনীর হাতে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
২০১৫ সালে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে অং সান সু চি ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু দুই বছর পর রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর সামরিক বাহিনীর নির্মম অভিযানের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যায় এবং এ বিষয়টি অং সান সু চি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হয়।
সেনা অভ্যুত্থান সেটা কি দেশের জন্য ভালো?
সেনা অভ্যুত্থান বা সামরিক শাসন সেটা কখনো কোনো দেশের জন্য ভালো না, যাঁরা মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থান দেখে বাংলাদেশেও এমন হোক্ ভাবছেন! তাঁদের উদ্দেশ্য বলি, বাক্ স্বাধীনতা, বাক্ হীনতা, পরাধীনতার মধ্যে থাকবেন, এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কি” সেটা কখনো চোখে দেখবেন না, সামরিক শাসনের অধীনস্থ হওয়ার মধ্যে দিয়ে। তাই দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে গণতান্ত্রিক পার্টিদের মধ্যে নিজেদের সমস্যা সমাধান করা ও দেশের নাগরিকদের শান্ত ও সুষ্ঠ রাখাই গণতান্ত্রিক সরকারের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।