the truth author

জীবনের কিছু বাস্তব কথা

জীবনের বাস্তবতা কত যে নির্মম তা একজন বাস্তববাদী মানুষকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো আপনি বুঝতে পারবেন।

প্রায় এক যুগ পর দিহানের বাড়িতে তাঁর শিক্ষক আসলেন!

দিহান শিক্ষককে দেখে আশ্চর্য হয়ে শ্রদ্ধা বড়া কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো?

স্যার আপনি কেমন আছেন!

স্যার উত্তর দিলেন হ্যাঁ আমি ভালো আছি!

তোমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে!

দিহান উত্তরে বললো! স্যার হ্যাঁ ভালো যাচ্ছে, তবে স্যার আপনার বলা কিছু কথা আজও আমার জীবনকে ভালো রাখতে শেখায়।

স্যার দিহানের জবাবে বললেন কেনো কিভাবে, আমি কি বলেছিলাম?

দিহান বললো স্যার আপনিই একদিন বলেছিলেন!

“জীবন গড়ার জন্য, মানুষ হওয়ার জন্য, ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ার, আর্মি এসব হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই প্রতিযোগিতা করার! প্রয়োজন হলো মানুষ হওয়ার! জন্ম নিলে শুধু মানুষ হবে, তা কিন্তু না! মানুষ হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করতে হয় যা সবাই করতে পারে না! এবং ভালো থাকা মন্দ থাকা তা তোমার চিন্তাভাবনা ও কর্মই নির্ণয় করবে।

এবং সব চাইতে ভালো তখনই থাকবে, যখন মাঝে মধ্যে কালো চশমাকে ভালোবাসে অন্ধ হতে পারবে! বোবা হতে পারবে।

 

মনে রেখো পৃথিবীর মধ্যে সব অস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী অশ্রু হলো কলম। তাই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করতে কলম প্রয়োজন! অস্ত্র নয়।

অস্ত্রধারী এবং রাজনীতিবিদরা কাহিনী সৃষ্টি করলেও সেই কাহিনীর ইতিহাস যুগ যুগান্তরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মদের কাছে তুলে ধরে কলম, অস্ত্র নয়।

স্যার এই কথা গুলো আপনার বলা সেই সময় বুঝতে পারিনি, এখন যখন বড় হয়েছি তখন সব কথার মর্ম বুঝতে পেরেছি।

স্যার আমি এখন কালো চশমা পড়ে এই জগতে বসবাস করতেছি! জগতের নিয়মের সাথে চলতে শিখতেছি কালো চশমা ও বোবা হয়ে।

 

স্যার বললেন কিভাবে আর কেনো?

দিহান বললো! আমি দেখেছি দুর্বৃত্তরা একটা নিরাপদ মানুষকে জনসম্মূখে কুপিয়ে হত্যা করতেছে! শত শত মানুষ নীরব ছিলো সঙ্গে আমিও ছিলাম। তাঁদের মতো হয়ে দেখতেছিলাম! ঘটনাক্রমে পুলিশ আসলো! পুলিশ যখন মানুষদের জিঙ্গেস করলো কে করেছে এই হত্যা? তখন কোনো মানুষ কিছুই দেখেনি বললো-ছেলেটি হত্যার দৃশ্যে। সবাই প্রথমে বোবা ছিলো পরবর্তীতে হলো কালো চশমা পরে অন্ধ। যাঁর জন্য প্রথমে প্রতিবাদ না করে হত্যার দৃশ্য দেখলেও শেষে কালো চশমা লাগিয়ে কিছুই দেখলো না।

তাহলে আপনারা বলতে পারেন! আমি কেনো বললাম না, কেনো চুপ ছিলাম তাঁদের মতো?

আমি বলতে চেয়েছিলাম, তখন একজন বললো! যখন তুমি বলবে পুলিশদের কাছে কিছু দুর্বৃত্তরা এই ছেলেকে এইভাবে হত্যা করেছে, দুর্বৃত্তদের পুলিশ ধরতে না পারলেও তোমার জবানবন্দী দেওয়ার জন্য একসময় নিজেকে জেলে অথবা বিভিন্ন ভাবে হয়রানির স্বীকার হতে হবে, তখন কেউ থাকবে না তোমার পাশে! তাই নিজে বোবা ও কালো চশমা পরে থাকো এটাই তোমার জন্য ভালো। কারণ এই দেশে প্রতিবাদের ভাত নেই চোখে দেখার মর্ম নেই। সবাই কালো চশমা পড়ে ও বোবা হয়ে আছে বাঁক স্বাধীনতা হারিয়ে।

 

তখনি হঠাৎ আমার শৈশবের স্যারের উপদেশ মনে হলো! তখন আমি চুপ রইলাম! কালো চশমা ও বোবার মর্ম বুঝতে পারলাম।

রাষ্ট্র গরিবদের উপর জুলুম নির্যাতন করছে, রাষ্ট্রের সরকারী উচ্চপদস্থ লোক দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে বিদেশে বাড়ী ঘর তৈরি করছে। আর এই দিকে নিজ দেশের মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছে।

প্রবাসীরা বিদেশ থেকে কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠায়, কিন্তু তাঁদেরকে দেশে আসলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানির স্বীকার হতে হয়, এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে সরকারি চাকুরিজীবীদের দ্বারস্থ হওয়ার পরেই।

দেশের মানুষ কষ্ট করতেছে এক বেলা ভালো আহারের জন্য পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে! আর এই দিকে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়তেছে রাজনীতিবিদ থেকে নিয়ে সরকারি আমলারা। দেশে এখন কালো টাকা সাদা করার আইন থাকলেও কালো চশমা খুলে সাদা চশমা পড়ার আইন নেই জনসাধারণের। বাঁক-স্বাধীনতা ও প্রতিবাদ করতে হলে চোখ দিয়ে দেখতে হয় কিন্তু কালো চশমা পড়া ব্যক্তি তো কিছুই দেখে না এক অন্ধকার ছাড়া।

দেশে সব অধিকাংশ মানুষের চোখে এখন কালো চশমা, কেউ নিজ ইচ্ছায় কালো চশমা পরিধান করতেছে নিজে ভালো থাকার জন্য, আবার কাউকে জোর করে কালো চশমা পড়াইতেছে সত্য গোপন রাখার জন্য।

 

যাঁরা সাদা কে সাদা বলে, কালো কে কালো বলে হুংকার দেয় তাঁদের হতে হয় জেলে বন্দি, গুম, কিংবা হত্যার মতো নির্মম অত্যাচারের স্বীকার।

স্যার! আমি ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ারি, আর্মি, পুলিশ হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করার চেষ্টা করিনি, করতেছি মানুষ হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা, যা সবাই করে না এবং করতে পারে না।

দেশে অধিকাংশ শিক্ষিত আমলারা দেশের ডাকাতি করতেছে কলম ধরে! আর বিচার হয় তাঁদের যাঁরা একবেলা ভাত খাওয়ার জন্য চুরি করে! লজ্জা করে না সে দেশের সরকার কিংবা দেশ প্রধাদের।

(হায়রে মানবতা)

আমি সব কিছু দেখে মাঝে মধ্যে কালো চশমা পড়ে থাকি ও বোবা হয়ে থাকি, ঘৃণ্য দৃশ্য না দেখার জন্য, এবং কাউকে না বলার জন্য।

দেখেছি একটা ধর্ষিতা মেয়ে ধর্ষণের বিচারের জন্য গেলে আরো একাধিকবার ধর্ষণের স্বীকার হতে হয় বিভিন্ন ভাবে।

 

তাই এখন দেশে ধর্ষণ বাড়লেও বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে না ধর্ষিতারা, আরো একাধিকবার ধর্ষণ ও সম্মানহানির ভয়ে। তাই মেয়েরাও এখন বোবা ও কালো চশমা পড়ে থাকে নিজে ভালো থাকার জন্য।

দেশের বর্তমানে এই অবস্থা যদি ভালো থাকতে চাও বোবা হয়ে থাকো, যদি ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে চাও কালো চশমা পড়ে থাকো।

স্যার! তাই আমি আপনার কথা গুলো স্বরণ করে নিজের কর্মের দ্বারা ভালো থাকার চেষ্টা করি। এবং সমাজে ভালো থাকার জন্য বেঁচে থাকার জন্য কালো চশমা পড়ে অন্ধ ও বোবা হয়ে থাকি লোকালয়ে জনসম্মূখে। আর নির্জনে বসে একা লেখালেখি করি বাস্তবতার চিত্র নিয়ে।

স্যার! দিহানের সব কথা গুলো শুনে বললেন-দিহান শুনো! আরো কিছু কথা। সব সময় কালো চশমা ও বোবা হয়ে থাকলে অপরাধীরা দিন দিন তাঁদের অপরাধ চালিয়ে যাবে। এবং পৃথিবীর বুকে অপরাধ সৃষ্টি হবে, হবে প্রকৃতি দূষিত ও মানুষ হবে অত্যাচারিত।

তাই তিনি ইংরেজ লেখক শেক্সপিয়ারের একটি উক্তি আমাকে শোনালেন।

“ভীরুরা তাদের প্রকৃত মৃত্যুর আগেই বহুবার মরে, কিন্তূ সাহসীরা জীবনে মাত্র একবারই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে থাকে”৷

তাই সব সময় বোবা ও কালো চশমা পড়ে থাকাটা শুভনীয় নয় নিজের জন্য এবং জাতির জন্য।

 

যখন তুমি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে শিখবে তখন আরো মানুষ তোমার জীবনের বিনিময়ে কালো চশমা ভেঙ্গে বোবা থেকে কথা বলা শিখবে মৃত্যুকে জয় করতে শিখবে।

তখনই অপরাধীরা তাঁদের অপরাধ থেকে পরিত্রাণ খুঁজবে এবং ভয়ে পালাবে।

মানুষের মধ্যে বাঁক স্বাধীনতা জাগ্রত ও ভয় দূর হবে। মানুষ তাঁদের অধিকার ফিরে পাবে। যারাই নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করে তাঁরাই দিন শেষে স্বাধীনতা অর্জন করে। অত্যাচারীদের জুলুম সব সময় চিরস্থায়ী নয়।

তাই সময় এখন কথা বলা শেখার! কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলার, প্রতিবাদ করার! জুলুম নির্যাতন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার।

এই বলে দিহানের স্যার চলে গেলেন।

Exit mobile version